close
ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!
চট্টগ্রামে দেশের অন্যতম বিতর্কিত ও শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের ৬টি কারখানা বন্ধের ঘোষণা ঘিরে উত্তাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বন্ধ হওয়া কারখানাগুলোর মধ্যে রয়েছে এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ, এস আলম পাওয়ার প্ল্যান্ট লিমিটেড, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডসহ কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান। এই কারখানাগুলো চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার কালারপুল, ইছানগর এবং বাঁশখালী এলাকায় অবস্থিত।
২৪ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) দুপুরে এস আলম গ্রুপের পক্ষ থেকে একটি নোটিশ জারি করে কারখানাগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। নোটিশে বলা হয়, কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে অনিবার্য কারণবশত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারখানা বন্ধ থাকবে। তবে নিরাপত্তা, সরবরাহ ও জরুরি বিভাগ চালু থাকবে। এই আকস্মিক ঘোষণায় অন্তত ১২ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী বিপাকে পড়েছেন।
বন্ধ ঘোষণার নোটিশ দেখে শ্রমিকরা কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ শুরু করেন। কালারপুল এলাকার এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডে বেলা সাড়ে তিনটায় দেখা যায়, শতাধিক শ্রমিক বিক্ষোভ করছেন। তারা অভিযোগ করেন, আকস্মিক নোটিশের ফলে পরিবার–পরিজন নিয়ে তারা গভীর সংকটে পড়েছেন।
এস আলম গ্রুপের এই সিদ্ধান্তের পেছনে বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে।
১. আর্থিক দুর্নীতি ও বিতর্ক: সম্প্রতি ব্রিটিশ গণমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার সহযোগীরা ডিজিএফআইয়ের সহায়তায় কয়েকটি ব্যাংক দখল করেছেন। এর মাধ্যমে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে অন্তত ১০ বিলিয়ন ডলার বা ১ হাজার কোটি মার্কিন ডলার সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
২. ব্যাংকিং সংকট: এস আলম গ্রুপের আর্থিক অনিয়ম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরও এই বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।
৩. ব্যবসায়িক অস্থিতিশীলতা: ব্যাংকিং খাতে এস আলম গ্রুপের উপর আনা অভিযোগের কারণে প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক চাপের মধ্যে পড়তে পারে।
বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ২৪ ডিসেম্বর দুপুরে। তবে এটি পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
এস আলম গ্রুপের পক্ষ থেকে মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিনের স্বাক্ষরে এই নোটিশ জারি করা হয়। এতে কারখানার নিরাপত্তা ও সরবরাহ বিভাগ চালু রাখার কথা বলা হলেও, শ্রমিকদের চাকরির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
এই সিদ্ধান্ত শ্রমিকদের জন্য চরম বিপর্যয় ডেকে এনেছে। তাদের অনেকেই পরিবারসহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়বেন। তারা আকস্মিক বন্ধের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন।
১. শ্রমিকদের অধিকার: শ্রম আইন অনুযায়ী, শ্রমিকদের ন্যূনতম সুবিধা নিশ্চিত করা জরুরি। এই পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা উচিত।
২. সরকারি পদক্ষেপ: সরকারের উচিত শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানো এবং এস আলম গ্রুপের আর্থিক কার্যক্রমের স্বচ্ছতা তদন্ত করা।
৩. ব্যবসায়িক স্বচ্ছতা: এস আলম গ্রুপকে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে অর্থ সরানোর অভিযোগের বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে।
এস আলম গ্রুপের এই আকস্মিক সিদ্ধান্ত শুধু শ্রমিকদের নয়, পুরো শিল্পখাতের ওপর একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এটি বাংলাদেশের শিল্পনীতি, আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং শ্রমিক অধিকার রক্ষায় নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। সরকারের উচিত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া, যাতে এমন সংকট ভবিষ্যতে আর না ঘটে।
Nessun commento trovato