জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) পরিকল্পিতভাবে পুরো জুলাই মাসকে নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদী। শনিবার (২৪ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, “এনসিপির তিনটি বড় ভুল হলো—জুলাইকে কুক্ষিগত করা, অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির বিস্তার, এবং বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্যকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেওয়া। এনসিপি নিজেদের দলীয় স্বার্থে পুরো জুলাই মাসকে কব্জা করে রেখেছে, যা একটি জাতীয় দুর্যোগের মতো।”
শরিফ ওসমান হাদী আরও দাবি করেন, এনসিপির বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা আওয়ামী লীগের হয়ে গোপনে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছেন। তার ভাষায়, “ফ্যাসিস্ট ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে গেলেও তাদের দোসররা এখনো রাষ্ট্রযন্ত্রে সক্রিয়। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে তারা অবস্থান করে আওয়ামী লীগকে বাঁচানোর পাঁয়তারা করছে। উপদেষ্টাদের অনেকের বক্তব্যে রাজনৈতিক অসততা ও সুবিধাবাদের ইঙ্গিত স্পষ্ট।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “আমরা যদি এখনই এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত না করি, তাহলে আগামী দিনে দিল্লির চাপে নতুন রাজনৈতিক দলগুলো আওয়ামী লীগ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বাধ্য হবে। তখন যারা আজকে প্রতিবাদ করছেন, তাদের ‘জুলাইযোদ্ধা’ আখ্যা দিয়ে শাস্তির মুখে ঠেলে দেওয়া হবে।”
জুলাই ঘোষণাপত্রের দাবি:
সংবাদ সম্মেলনে শরিফ ওসমান হাদী দাবি করেন, “আমরা জুলাই ঘোষণাপত্র চাই, এবং তা এখনই চাই। আগামী এক সপ্তাহজুড়ে আমরা দেশের প্রতিটি জনপদে গিয়ে জনগণের কাছে এই দাবির পক্ষে সমর্থন চাইব। জনগণই এই দেশের মালিক, এবং তারাই ঠিক করবে এই রাষ্ট্র কোন পথে চলবে।”
তিনি আরও জানান, এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমেই রাজনৈতিক ঐক্য, সুশাসন ও বিচার নিশ্চিত করা যাবে। এটি হবে একটি ঐতিহাসিক দলিল, যা ভবিষ্যৎ রাজনীতির দিকনির্দেশনা দেবে।
অধ্যাপক ইউনূসকে প্রধান করে জাতীয় সরকারের প্রস্তাব:
ইনকিলাব মঞ্চ জাতীয় সরকারের একটি রূপরেখা তুলে ধরে। এতে প্রস্তাব করা হয়, সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্বে থাকবেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সরকারে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব থাকবে, তবে তারা মন্ত্রী বা উপদেষ্টা নয়, বরং ওয়াচডগ বা পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
শরিফ ওসমান হাদী বলেন, “এই সরকার হবে অন্তর্বর্তীকালীন, যার মূল উদ্দেশ্য হবে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষতা রক্ষা এবং দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন নিশ্চিত করা। বিএনপি, জামায়াত কিংবা অন্য রাজনৈতিক দল যদি এই প্রক্রিয়ায় অসহযোগিতা করে, তাহলে তাদের জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।”
শেষ হুঁশিয়ারি
ওসমান হাদী দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “সরকার যদি জুলাই ঘোষণাপত্রের নিশ্চয়তা না দেয়, তাহলে কোনো বিচারক আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধের রায় দিতে সাহস করবেন না। এ এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। তবে আমরা জানি, এই দেশ বাঁচাতে আমাদের জীবন উৎসর্গ করতেও আমরা প্রস্তুত। এটাই আমাদের অঙ্গীকার।”
ইনকিলাব মঞ্চের এই বক্তব্য দেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এনসিপির ওপর গুরুতর অভিযোগ, অধ্যাপক ইউনূসকে সরকার প্রধান হিসেবে প্রস্তাব এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন শরিফ ওসমান হাদী। এখন দেখার বিষয়, এই দাবির প্রেক্ষিতে দেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলোর অবস্থান কী হয়।