ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর বর্তমানে কার্যত অচল। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর আওতাধীন কাস্টমস কর্মকর্তাদের এক দফা দাবিতে সারাদেশব্যাপী ডাকা কর্মবিরতির প্রেক্ষিতে শনিবার (১৮ জুন) এই বন্দরেও কর্মবিরতি পালিত হয়। কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দিনভর কার্যক্রম থেকে বিরত থাকায় একটিও নতুন কাগজপত্রে সই হয়নি। ফলে পুরো স্থলবন্দরজুড়ে কার্যক্রম প্রায় সম্পূর্ণ থমকে গেছে।
বন্দরে পণ্য প্রবেশ, যাচাই-বাছাই, কাগজপত্র যাচাই এবং চূড়ান্ত অনুমোদনের কাজ হয়ে থাকে এনবিআরের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে। কিন্তু শনিবার সকাল থেকেই তারা তাদের নিজ নিজ দফতরে থাকলেও কোনো সরকারি নথিতে সই করেননি। একমাত্র যেসব পণ্যের কাগজপত্র আগেই প্রস্তুত করে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছিল, কেবল সেগুলোকেই ভারতে রপ্তানি করা সম্ভব হয়েছে।
বন্দরের অন্যতম ব্যবসায়ী নেসার আহমেদ ভূঁইয়া বলেন,বন্দরে একপ্রকার অচলাবস্থা চলছে। ব্যবসায়িক কার্যক্রম নেই বললেই চলে। প্রতিদিন কয়েক ডজন ট্রাক মালামাল যেত ভারত, এখন সব থেমে আছে। কবে স্বাভাবিক হবে সেটা জানি না। শুনেছি এনবিআর থেকে কেউ আসছেন, দেখা যাক কী হয়।
অন্য এক ব্যবসায়ী হাসিবুল হাসান বলেন,কমপ্লিট শাটডাউনের কারণে নতুন করে কোনো পণ্য শনিবার ভারতে যায়নি। কেবল যেসব কাগজপত্র আগে থেকে প্রস্তুত ছিল, তা দিয়েই কিছু মালামাল পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান,পণ্য চলাচল বন্ধ থাকলেও বন্দর দিয়ে যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক রয়েছে। তবে মালামাল না যাওয়ায় বন্দরজুড়ে কার্যত নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে।
স্থলবন্দর এলাকায় সকাল থেকেই দেখা যায়, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দপ্তরে থাকলেও কোনো কাজ নেই তাদের হাতে। কাউন্টার ফাঁকা, কাস্টমস চেকপোস্টে নেই তৎপরতা। কেউ কেউ ক্যান্টিনে সময় কাটাচ্ছেন, কেউ আবার নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে মোবাইল ঘাঁটছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মূলত ‘শাটডাউনের’ আওতায় নির্দিষ্ট দাবিগুলো আদায়ের লক্ষ্যে এই কর্মবিরতি চলছে।
ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ বলছেন, এই অচলাবস্থার ফলে দু’দেশের মধ্যে রপ্তানি-বাণিজ্যে বড় ধাক্কা লাগবে। যেসব পণ্য সীমিত সময়ের মধ্যে রপ্তানি করতে হয়, যেমন খাদ্যপণ্য, তাজা মাছ বা ফল— এসব নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে,এমন চলতে থাকলে আমাদের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হবে। আমরা দ্রুত এই সমস্যা সমাধানের দাবি জানাচ্ছি।
জানা গেছে, এনবিআরের অধীনস্ত কাস্টমস কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে তাদের পদের আপগ্রেডেশন ও কিছু প্রশাসনিক সুবিধার দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। দাবিগুলো বাস্তবায়নে বারবার আশ্বাস দিলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় তারা দেশব্যাপী কর্মবিরতির পথে গেছেন।
এনবিআরের একটি সূত্র জানায়, সমস্যা সমাধানে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছে এবং অচিরেই একটি সমাধান আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আখাউড়া স্থলবন্দরে এনবিআরের শাটডাউন কার্যক্রমের কারণে রপ্তানি-বাণিজ্যে চরম ধস নেমেছে। একদিকে কর্মবিরতি, অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের কোটি টাকার পণ্যের ঝুঁকি— সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ক্রমেই উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। এখন সময়মতো সরকারি হস্তক্ষেপ না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।