close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

এনবিআরের ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ঘুষ গ্রহণ ও কর ফাঁকির অভিযোগে এনবিআরের ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের বিস্তৃত অনুসন্ধান শুরু। কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার—হয়রানির শিকার করদাতারাও মুখ খুলছেন।..

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর ভেতরে দীর্ঘদিনের লুকিয়ে থাকা দুর্নীতির চিত্র যেন অবশেষে ফাঁস হয়ে পড়ল। কর আদায়ে ঘুষ গ্রহণ, কর ফাঁকির সুযোগ করে দেওয়া এবং করদাতাদের হয়রানির মতো গুরুতর অভিযোগে এনবিআরের পাঁচজন প্রভাবশালী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ মঙ্গলবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

এটি নিছক কোনো অভিযোগ নয়—এটি কর ব্যবস্থা ও অর্থনীতির শিরায় শিরায় গজিয়ে ওঠা ঘুষের শিকড় উপড়ে ফেলার প্রথম ধাপ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা হলেন—

  • লুৎফুল আজীম: এনবিআর সদস্য

  • আবদুর রশীদ মিয়া: ভ্যাটের বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (LTU) অতিরিক্ত কমিশনার

  • মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন: সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক, কর গোয়েন্দা সেল (CIC)

  • মোহাম্মদ শিহাবুল ইসলাম: উপকর কমিশনার, কর অঞ্চল-১৬

  • তারেক হাসান: যুগ্ম কমিশনার, এনবিআর

দুদক সূত্র বলছে, এই পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রমাণ রয়েছে যে তারা দায়িত্ব পালনের সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে কর ফাঁকির সুযোগ দিয়েছেন। বিনিময়ে তারা মোটা অঙ্কের ঘুষ গ্রহণ করেছেন। শুধু তাই নয়, সরকারকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারানোর পথ করে দিয়েছেন এরা।

দুদক জানিয়েছে, অনুসন্ধানে জানা গেছে—ঘুষ না দিলে করদাতার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির ঘটনা প্রায় নিয়মে পরিণত হয়েছে। যারা বেশি কর দিয়েছে, তারাও ন্যায্য রিফান্ড পেতে গিয়ে পড়ছে দুর্নীতির ফাঁদে।

অভিযোগ রয়েছে, যারা আগাম কর দিয়েছে বা নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি কর পরিশোধ করেছে, তাদের সেই টাকা ফেরত পেতে গেলেও দিতে হচ্ছে ঘুষ। কখনও কখনও সেই ঘুষের অঙ্ক পরিশোধিত করের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছুঁয়েছে।

দুদকের একজন তদন্ত কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "কিছু করদাতাকে 'পছন্দের তালিকায়' রেখে নিয়ম ভেঙে কর কমিয়ে দেওয়া হয়। এর বদলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সরাসরি লাভবান হন। এই পুরো প্রক্রিয়াটি একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।"

বিশ্লেষকরা বলছেন, দুর্নীতি বন্ধ না হলে সরকারের বার্ষিক রাজস্ব ঘাটতি আরও বাড়বে। এর প্রভাব পড়বে জাতীয় বাজেটে, উন্নয়ন প্রকল্পে, এবং দীর্ঘ মেয়াদে জনগণের ওপর বাড়তি কর চাপিয়ে তোলা হতে পারে।

দুদক জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রমাণ যাচাই চলছে। প্রয়োজন হলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দুদকের একজন পরিচালক বলেন, "এই অনুসন্ধান প্রাথমিক নয়, এটি এখন তদন্তে রূপ নিতে চলেছে। আমরা কোনও দুর্নীতিবাজকে ছাড় দেব না।"

দেশের রাজস্ব ব্যবস্থায় দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির। কিন্তু এনবিআরের মতো শীর্ষ প্রতিষ্ঠানে যদি এই ধরনের কেলেঙ্কারি ঘটে, তাহলে করদাতাদের আস্থা থাকবে কোথায়—এই প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞরা।

দুদকের এই অনুসন্ধান শেষ পর্যন্ত কতটা কার্যকর হয়, তা সময়ই বলবে। তবে এই ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করল—দেশের রাজস্ব খাত শুধু টাকার নয়, নৈতিকতারও বড় এক যুদ্ধক্ষেত্র। এনবিআরের ভেতরে লুকিয়ে থাকা দুর্নীতির মূল চক্র ভাঙতে হলে দরকার উদাহরণযোগ্য শাস্তি, শক্তিশালী স্বচ্ছতা, এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা।

Nenhum comentário encontrado