জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অভ্যন্তরীণ সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের প্রতিক্রিয়ায় সরকার বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। আন্দোলনের রেশ কাটতে না কাটতেই, এনবিআরের চারজন প্রভাবশালী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে, যা রাজস্ব প্রশাসনের অভ্যন্তরে একধরনের ভূকম্পন সৃষ্টি করেছে।
সরকারি আদেশে যাদের অবসরে পাঠানো হয়েছে, তারা হলেন—
কাস্টমস বিভাগের শুল্কনীতি সদস্য হোসেন আহমদ
ভ্যাটনীতি সদস্য ড. আব্দুর রউফ
আয়কর বিভাগের এনবিআর সদস্য আলমগীর হোসেন
কর কমিশনার শাব্বির আহমদ
এই সিদ্ধান্তের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে বুধবার (২ জুলাই), যখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) পৃথক পৃথক আদেশে এই চার কর্মকর্তার বাধ্যতামূলক অবসর নিশ্চিত করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র।
সম্প্রতি এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ বিভিন্ন দাবি আদায়ে সরব হয়ে ওঠে। তারা এনবিআরের দুর্বল নীতিমালা, অদক্ষতা এবং রাজনৈতিক প্রভাবের বিরুদ্ধে মুখ খোলে। এমনকি রাস্তায় নামার হুমকি দিয়েও সরকারকে চাপে ফেলে। এর প্রেক্ষিতে অনেকেই আশঙ্কা করছিলেন বড় রদবদল আসছে—আর সেটিই এখন বাস্তব।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ কিছুদিন আগেই মন্তব্য করেছিলেন, “যারা কাজ করবে, তাদের কোনো সমস্যা হবে না।” কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, সেই বার্তা উপেক্ষিত হয়নি। অবসরে পাঠানোদের অনেকে বরাবরই সংস্কারের বিরুদ্ধে নানাভাবে অবস্থান নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান আন্দোলনের ঠিক পরদিন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন,
"আমরা কেউই শত্রু নই। সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি—সব ভুলে এখন রাজস্ব আহরণে মনোযোগ দিন।"
তবে তার এই বক্তব্যও অনেকের চোখে প্রশাসনিক সতর্কবার্তা হিসেবে প্রতিফলিত হয়েছে।
এই বাধ্যতামূলক অবসর রাজস্ব বিভাগের মধ্যে এক ধরনের ভীতির পরিবেশ তৈরি করেছে। কেউ কেউ এটিকে "সংস্কার বিরোধীদের প্রতি বার্তা" হিসেবে দেখছেন। অন্যদিকে আবার এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের নেতা-কর্মীরা একে নিজেদের “প্রথম জয়” বলে ঘোষণা দিচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত এনবিআরের কার্যক্রমে দুটি দিক থেকে প্রভাব ফেলতে পারে:
১. প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ফেরাতে সহায়ক হতে পারে
২. আবার এটিকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখেও হতাশ হতে পারে দক্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআরের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে এমন হঠাৎ চারজন শীর্ষ কর্মকর্তার বিদায় শুধু একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং এটি ভবিষ্যৎ নীতিনির্ধারণ এবং রাজস্ব আহরণের গতিপথও অনেকটাই নির্ধারণ করে দেবে। এনবিআরের সংস্কার কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, সেটাই এখন সময়ের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।