নির্বাচন সামনে রেখে প্রয়োজনীয় সকল সংস্কার মাত্র এক মাসেই বাস্তবায়ন সম্ভব—এই বক্তব্য দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তার ভাষায়, রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে নির্বাচনমুখী সংস্কারগুলো বাস্তবায়নে কোনো বাধা নেই।
সোমবার (২ জুন) সন্ধ্যায় রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “আমরা পুরোপুরি বিশ্বাস করি, ডিসেম্বরের মধ্যেই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন শুধু রাজনৈতিক ঐকমত্য এবং কার্যকর উদ্যোগ। যেসব সংস্কার দরকার, তা এক মাসের মধ্যেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব। আমরা তা কমিশনের কাছে পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করেছি।”
তিনি আরও বলেন, “সংবিধানের বাইরে অন্য সব সংস্কার নির্বাহী আদেশ বা অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে এক মাসের মধ্যেই বাস্তবায়নযোগ্য। কাজেই নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।”
বৈঠকে অংশগ্রহণ করা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও নির্বাচন ঘিরে সংস্কারের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনায় উঠে আসে। আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা জানিয়েছেন, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা, ইভিএম বাতিল, প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা, ভোটগ্রহণ পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি নানা ইস্যুতে একটি সুসংহত রূপরেখা তৈরি করা প্রয়োজন।
এই বৈঠকে অংশ নেয় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি, এনসিপি, এলডিপি, গণসংহতি আন্দোলন, লেবার পার্টি, খেলাফত মজলিস, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, সিপিবি, বাসদ, এবি পার্টি, নাগরিক ঐক্যসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল ও জোটসমূহ।
বিএনপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, নির্বাহী কমিটির সদস্য রুহুল কুদ্দুস কাজল। জামায়াতে ইসলামির পক্ষে অংশ নেন নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আজাদ। এনসিপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার।
এছাড়াও এলডিপির চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, খেলাফত মজলিসের ড. আহমদ আব্দুল কাদের, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর, সিপিবির সাজেদুল হক রুবেল, বাসদের বজলুর রশিদ ফিরোজ, এবি পার্টির আসাদুজ্জামান ফুয়াদ এবং নাগরিক ঐক্যের সাকিব আনোয়ার অংশগ্রহণ করেন।
সর্বদলীয় ঐকমত্য কমিশনের এই বৈঠক ছিল দ্বিতীয় দফার অংশ। এর আগে, প্রথম দফার বৈঠক ২০ মার্চ থেকে শুরু হয়ে ১৯ মে পর্যন্ত চলেছিল। ওই পর্যায়ে ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে মোট ৪৫টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজসহ অন্যান্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, নির্বাচন নিয়ে সময়ক্ষেপণ বা জটিলতার অবকাশ নেই—বরং সিদ্ধান্ত ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে দ্রুততার মধ্যেই ভবিষ্যতের সমাধান লুকিয়ে আছে। এখন শুধু প্রয়োজন রাজনৈতিক ঐকমত্য ও সদিচ্ছার।