ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরান এখনও পর্যন্ত যা করেছে তা নেহায়েত এক প্রাথমিক ‘সতর্কতা’— এমনটাই বলছেন ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর নবনিযুক্ত প্রধান মেজর জেনারেল সায়্যিদ আব্দুলরাহিম মুসাভি। মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে তিনি ইঙ্গিত দেন, এক ভয়াবহ ও শাস্তিমূলক প্রতিশোধের প্রস্তুতি নিচ্ছে তেহরান, যা হবে আরও সুসংগঠিত এবং ধ্বংসাত্মক।
“শুক্রবার থেকে যেসব প্রতিরক্ষা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, সেগুলো ছিল কেবল ইসরাইলকে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে। কিন্তু এখন সময় এসেছে প্রকৃত মূল্য পরিশোধের। ইসরাইল যা করেছে, তার চূড়ান্ত জবাব পেতে চলেছে তারা,” বলেন জেনারেল মুসাভি।
তিনি আরও বলেন, “ইহুদিবাদী দখলদার সরকার ইরানি জনগণের বিরুদ্ধে নির্লজ্জ সামরিক আগ্রাসন চালিয়েছে। এই হামলায় নারী, শিশু, এমনকি বয়স্করাও নিহত হয়েছেন। এটি শুধুমাত্র ইরান নয়, মানবতার বিরুদ্ধেই অপরাধ।
জেনারেল মুসাভির বক্তব্যে ইসরাইলের বিরুদ্ধে একাধিক আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। তিনি উল্লেখ করেন, গাজা ও লেবাননে প্রায় ৩০০ সাংবাদিক হত্যার পরও থেমে থাকেনি দখলদার বাহিনী। এবার তারা হামলা চালিয়েছে ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থা আইআরআইবি’র উপর — যা স্বাধীন সাংবাদিকতা এবং মুক্ত মত প্রকাশের বিরুদ্ধে এক স্পষ্ট বর্বরতা।
ইসরাইল শুধু বোমা নয়, শব্দের যুদ্ধেও লিপ্ত। তারা সত্যের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করতে চায়। কিন্তু আমরা তা হতে দেব না, বলেন তিনি।
সেনাপ্রধান জানান, ইরানি জাতি ইতিহাসজুড়েই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মাথা নত করেনি। বরং প্রত্যেকবার নিজেদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে প্রতিশোধ গ্রহণ করেছে। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।
তার ভাষায়, “আমাদের বিজ্ঞানী, সশস্ত্র বাহিনীর বীর কমান্ডার এবং নিরীহ জনগণের শাহাদাত আমাদের প্রতিশোধের অঙ্গীকারকে শক্তিশালী করেছে। আমরা শীঘ্রই শাস্তিমূলক প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে ইসরাইলকে তার অপরাধের মূল্য দিতে বাধ্য করব।”
এই ঘোষণার পর থেকেই আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। ইসরাইল-ইরান সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে জাতিসংঘসহ বিশ্ব কূটনৈতিক অঙ্গনে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের এই কণ্ঠস্বর আর আগের মতো সীমিত হুঁশিয়ারি নয়— বরং এটা হতে পারে ভবিষ্যৎ এক বড় সংঘর্ষের পূর্বাভাস।
জেনারেল মুসাভির সরাসরি ঘোষণা তেহরানের অবস্থানকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে— ইরান আর সহ্য করবে না। প্রতিরোধের আগুন জ্বলে উঠেছে এবং শিগগিরই তা বিস্ফোরিত হবে ইসরাইলের বিরুদ্ধে।
বিশ্ব এখন অপেক্ষায় — ইরানের সেই ‘প্রকৃত’ শাস্তিমূলক অভিযান কবে শুরু হয় এবং তার পরিণতি কী হয়।