একদলীয় পক্ষপাতের অভিযোগ: প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলল জামায়াত..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপি নেতা তারেক রহমানের লন্ডন বৈঠকের যৌথ বিবৃতিকে 'রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয়' বলে আখ্যায়িত করেছে জামায়াতে ইসলামি। দলটি মনে করছে, এ পদক্ষেপে প্রশ্নবিদ্ধ..

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডনে অনুষ্ঠিত বৈঠক এবং ওই বৈঠকের পর দেওয়া যৌথ বিবৃতি ঘিরে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি এ ঘটনাকে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে "ব্যতিক্রমী ও পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ" বলে আখ্যায়িত করেছে।

শনিবার (১৪ জুন) দলটির নির্বাহী পরিষদের এক জরুরি বৈঠক শেষে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, “যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের প্রতি অনুরাগ প্রকাশ করেছেন, যা তার নিরপেক্ষতার প্রশ্ন তোলে। এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত দৃষ্টান্ত।”

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। সেখানে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়।
জামায়াত মনে করে, দেশের শীর্ষস্থানীয় দায়িত্বে থাকা একজন ব্যক্তির কাছ থেকে এমন আচরণ প্রত্যাশিত নয়। দলটির ভাষায়, “গত ১৩ জুন লন্ডনে অনুষ্ঠিত বৈঠকটি একান্তভাবেই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে স্বাভাবিক ঘটনা হলেও, বৈঠকশেষে যৌথ বিবৃতি ও প্রেস ব্রিফিংয়ের ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক শিষ্টাচারের পরিপন্থী।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “এর মাধ্যমে দেশের জনগণের মনে একটি বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে— সরকার কি আদৌ নিরপেক্ষ থাকবে? যেখানে দেশে বহু রাজনৈতিক দল সক্রিয়, সেখানে শুধুমাত্র একটি দলের সাথে যৌথভাবে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করা সমীচীন নয়।”

এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে, প্রধান উপদেষ্টা এর আগে দেশে এবং বিদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। কিন্তু এই প্রথম কোনো দলের সাথে বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হলো।

জামায়াত আরও বলছে, “বিগত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচন কমিশন ও অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের রূপরেখা তুলে ধরেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি জানিয়েছিলেন, ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা রয়েছে। অথচ মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে লন্ডনে বসে একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নতুন সময়সীমার ইঙ্গিত দিয়ে বিবৃতি দেওয়া, তার আগের বক্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক।”

যৌথ বিবৃতিতে মধ্য ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। এই বিষয়ে জামায়াতের বক্তব্য, “আমরা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে — এটি গত ১৬ এপ্রিলেই আমাদের আমির তুলে ধরেছেন। তবে এমন কোনো সিদ্ধান্ত সব দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে নেওয়া উচিত ছিল।”

জামায়াতের অভিযোগ, “সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধান উপদেষ্টার এ ধরনের দলবিশেষের সঙ্গে যৌথ বিবৃতি প্রকাশে জনমনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। শুধু বিএনপির সাথে একমত হয়ে যদি সময় নির্ধারণ হয়, তবে সেই নির্বাচন আর সকলের জন্য গ্রহণযোগ্য থাকবে না।”

জামায়াত এই ঘটনাকে রাজনৈতিক ভারসাম্য ও সমতা নষ্ট করার ইঙ্গিত বলেও মনে করে।
নেতৃবৃন্দের ভাষায়, “যৌথ বিবৃতিতে বোঝানো হচ্ছে, সরকার ও বিএনপি একাট্টা হয়ে কাজ করছে। এতে করে দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও জনগণের চোখে সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।”

তারা আরও জানিয়েছে, এ নিয়ে তারা সরাসরি প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের কাছে মতামত তুলে ধরবে এবং নিরপেক্ষ অবস্থান পুনরুদ্ধারে তাঁর কার্যকর পদক্ষেপ চায়।

বিবৃতির শেষে দলটি স্পষ্ট করে বলেছে, “বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি আশা করে, নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতে সরকার একটি নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখবে। এ ছাড়া লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং জাতির সামনে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে।”

এদিকে শুক্রবার রাতে জামায়াতের শীর্ষ নেতারা একাধিক গণমাধ্যমকে জানান, “যদি সরকার ও বিএনপি নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেই নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়, তবে সেটি কখনোই জাতীয় ঐক্যের প্রতিফলন নয়। এটা বরং রাজনৈতিক বহুত্ববাদ ও অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রকে উপহাস করার শামিল।”

তারা বলেন, “আমরা কখনোই ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের বিরুদ্ধে নই। তবে নির্বাচন হতে হবে সকল দলের অংশগ্রহণে এবং সমান সুযোগে। শুধুমাত্র বিএনপিকে গুরুত্ব দিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হলে সেটি জাতির সঙ্গে অবিচার হবে।”

Ingen kommentarer fundet


News Card Generator