মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ইরানে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাঁচটি হাসপাতাল—এমন বিস্ফোরক তথ্য জানিয়েছেন ইরানের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রধান পির হোসেন কোলিভান্দ। শুক্রবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বিস্ফোরণের ফলে হাসপাতালগুলোর জানালার কাঁচ ভেঙে পড়েছে, ধোঁয়ার কারণে বহু রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে চিকিৎসা স্টাফদের মধ্যে। যদিও হাসপাতালগুলো সরাসরি লক্ষ্যবস্তু ছিল না বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা ভয়াবহ।
এই ঘটনার পেছনে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ইরান। কোলিভান্দ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন—এই হামলার দলিলপত্র আন্তর্জাতিক আদালতে উপস্থাপন করা হবে এবং এর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পির হোসেন কোলিভান্দ আরও বলেন, “ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে। হাসপাতাল কোনোভাবেই যুদ্ধক্ষেত্র হতে পারে না। আমরা জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সব মানবাধিকার সংস্থাকে বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছি।”
এই বিবৃতিতে হাসপাতালগুলোর নাম স্পষ্ট না করা হলেও মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ক্ষয়ক্ষতির সুনির্দিষ্ট স্থান ও সময় এখনো নিশ্চিত নয়। তবে ঘটনাগুলোর পেছনে ইসরায়েলের সামরিক তৎপরতার প্রমাণ মেলেছে।
ইরানের হামলায় ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত সরোকা মেডিকেল সেন্টার ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে দাবি করে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান।
তিনি বলেন,খামেনি নিজে ঘোষণা দিয়েছে, সে ইসরায়েল ধ্বংস করতে চায়। হাসপাতালে হামলার নির্দেশও দিয়েছে সে। এমন একজনকে আর বেঁচে থাকতে দেওয়া যায় না।এই মন্তব্য ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি-এর বিরুদ্ধে এক ধরনের সরাসরি হত্যার হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। অথচ ইরান সাফ জানিয়ে দিয়েছে—হাসপাতাল নয়, পাশের সামরিক স্থাপনাই ছিল তাদের টার্গেট।
রেড ক্রিসেন্টের বিবৃতিতে ইসরায়েলি "দ্বিমুখী আচরণের"ও সমালোচনা করা হয়। সরোকা হাসপাতালের ক্ষয়ক্ষতির জন্য ইরানকে দায়ী করলেও, গাজার শত শত হাসপাতালে চালানো বর্বর হামলার বিষয়ে চুপ রয়েছে ইসরায়েল সরকার।এই হামলায় গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। শত শত শিশু, নারী ও আহত বেসামরিক মানুষ চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর মুখে পড়ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা যতই বাড়ুক না কেন, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে কোনোভাবেই টার্গেট করা আন্তর্জাতিক আইন পরিপন্থি। অথচ যুদ্ধক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন মানার ন্যূনতম প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে না অনেক রাষ্ট্রের মধ্যে।
ইরানের রেড ক্রিসেন্টের পক্ষ থেকে পাঠানো নথিপত্রগুলো এখন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হাতে পৌঁছেছে। বিশ্ববাসীর এখন চাপে রাখা উচিত যেন এসব ঘটনা তদন্তসাপেক্ষে বিশ্ব আদালতে বিচারাধীন হয়।
ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ইরানের পাঁচ হাসপাতাল নিয়ে যেভাবে আন্তর্জাতিক মহলে নীরবতা চলছে, তা মানবতার জন্য অশনিসংকেত। যুদ্ধবাজ রাষ্ট্রগুলোর ইচ্ছেমাফিক হাসপাতাল ধ্বংসের ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে—কোথায় মানবতা? আর কত মৃত্যুর পর বিশ্ব বিবেক জাগবে?
 'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  
  
 
		 
				 
			



















 
					     
			 
						 
			 
			 
			 
			 
			 
			