এক মাসের মধ্যে মা দেশে ফিরে আসবে’ দাবির পেছনে আসলে কী আছে?—সত্য জানলে চমকে উঠবেন!..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভাইরাল ভিডিওতে দাবি করা হয়, শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ নাকি বলেছেন, “এক মাসের মধ্যে আমার মা দেশে ফিরবেন।” কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে উঠে এলো একেবারেই ভিন্ন চ..

সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তুলেছে একটি ভিডিও, যেখানে দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ বলেছেন—"এক মাসের মধ্যে আমার মা বাংলাদেশে ফিরে আসবেন।"
এই দাবিকে ঘিরে শুরু হয় নানা জল্পনা-কল্পনা, আলোচনার ঝড়।
বিশেষ করে দেশে রাজনীতিক অনিশ্চয়তা এবং আওয়ামী লীগের অনুপস্থিত নেতৃত্বকে ঘিরে যখন নানা গুঞ্জন, তখন এই বক্তব্য একটি বিস্ফোরক বার্তার মতো ছড়িয়ে পড়ে।

 

রিউমর স্ক্যানার টিম কর্তৃক পরিচালিত একটি গভীর অনুসন্ধান বলছে ভিন্ন কথা।
তারা ভিডিওটির মূল উৎস শনাক্ত করে জানতে পারে—সায়মা ওয়াজেদের এই বক্তব্যটি শেখ হাসিনার দেশে ফেরাকে ঘিরে নয়, বরং মিয়ানমারে সম্প্রতি সংঘটিত ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ও মানবিক সহায়তার ঘাটতির প্রসঙ্গে ছিল।

 

এই ভিডিওটির সূত্র হিসেবে পাওয়া গেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৫ সালের ২৮ এপ্রিল প্রকাশিত একটি ভিডিও, যার শিরোনাম ছিল:
“A Month After The Myanmar #Earthquakes”

রিভার্স ইমেজ সার্চ ও ভিডিও ফ্রেম বিশ্লেষণে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ভাইরাল হওয়া বক্তব্যের মূল ভিডিও এবং WHO-র ভিডিও এক এবং অভিন্ন
এতে দেখা যায়, সায়মা ওয়াজেদ (যিনি WHO SEARO-র আঞ্চলিক পরিচালক) মানবিক সংকটের চিত্র তুলে ধরছেন—তিনি বলেন:

 

ভূমিকম্পের এক মাস পার হলেও মিয়ানমারের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় এখনো ২৪ লাখ মানুষ জরুরি স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। বর্ষাকাল সামনে, তাই ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ও পানিবাহিত রোগের ভয়াবহ ঝুঁকি বাড়ছে। চিকিৎসা সামগ্রী এবং সেবাদানকারী লোকবলের তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে। জরুরি সহায়তা ছাড়া একটি বড় ধরনের স্বাস্থ্য বিপর্যয় অনিবার্য হয়ে উঠছে।”

এই বক্তব্যের কোনো অংশেই শেখ হাসিনার নাম, অবস্থান বা দেশে ফিরে আসা সংক্রান্ত কোনও ইঙ্গিত ছিল না

 

বিভিন্ন ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অনলাইন পোর্টালগুলো ভিডিওটির একটি নির্দিষ্ট অংশকে কেটে সংক্ষেপে এমনভাবে উপস্থাপন করে, যা দেখে মনে হয়—সায়মা ওয়াজেদ হয়তো মায়ের (শেখ হাসিনার) দেশে ফেরার বিষয়েই বলছেন।

এই ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে সাধারণ মানুষের আবেগ ও রাজনৈতিক মনোভাবকে প্রভাবিত করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য, বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

 

একজন আন্তর্জাতিক সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার বক্তব্যকে বিকৃত করে প্রচার করার মাধ্যমে:

  • জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে

  • রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ানো হচ্ছে

  • সত্যিকারের মানবিক সংকট থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের বিভ্রান্তিকর প্রচারণা রুখতে ডিজিটাল লিটারেসি এবং সোর্স যাচাইয়ের চর্চা অত্যন্ত জরুরি।


 

সায়মা ওয়াজেদের "এক মাস" মন্তব্য আদৌ শেখ হাসিনার দেশে ফেরার বিষয়ে ছিল না—এটি একটি সম্পূর্ণ মানবিক সংকট সম্পর্কিত বিবৃতি, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিকৃত করা হয়েছে।
দেশের জনগণের উচিত, দায়িত্বশীলতার সাথে তথ্য যাচাই করে শেয়ার করা এবং গুজব ছড়িয়ে না দেওয়া।

کوئی تبصرہ نہیں ملا