বাংলাদেশের ইতিহাসে যার প্রভাব অভাবনীয়, যিনি প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইতিহাসের অংশ হয়েছেন, সেই মহীয়সী নারী বেগম খালেদা জিয়ার জীবনাবসানের মধ্য দিয়ে আজ দেশের রাজনীতিতে এক বর্ণাঢ্য অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল। ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে জন্ম নেওয়া এই নেত্রী ৮০ বছর বয়সে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
সাধারণ গৃহিণী থেকে লৌহমানবী মেজর জিয়াউর রহমানের জীবনসঙ্গী হিসেবে নিতান্তই এক গৃহিণী হিসেবে পথচলা শুরু হয়েছিল তার। কিন্তু ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়ার মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর সময়ের প্রয়োজনে তিনি রাজনীতির কঠিন পথে পা বাড়ান। স্বামীর মৃত্যুর পর বিএনপির নেতৃত্ব গ্রহণ করে তিনি ধীরে ধীরে একজন দক্ষ ও দৃঢ় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হন।
গণতন্ত্রের মানসকন্যা স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আপসহীন আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে তিনি ১৯৯১ সালে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন। তার শাসনামলে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়, যা বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক মাইলফলক। তিনি মোট তিনবার (১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১) প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং দেশের উন্নয়ন, শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
সংগ্রাম ও ত্যাগ তার রাজনৈতিক জীবন কখনোই মসৃণ ছিল না। রাজনৈতিক সংঘাত, মিথ্যা মামলা এবং দীর্ঘ কারাবাসের মধ্যেও তিনি ছিলেন অবিচল। ফ্যাসিস্ট শক্তির নানা ষড়যন্ত্র ও নির্যাতন তাকে দমাতে পারেনি। তিনি আজীবন ছিলেন গণমানুষের নেতা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর।
ইতিহাসে অমর খালেদা জিয়া কেবল একটি নাম নয়, তিনি বাংলাদেশের রাজনীতির এক ধ্রুবতারা। তার সাহস, নেতৃত্ব এবং ত্যাগ তাকে ইতিহাসের পাতায় অমর করে রাখবে। নারী নেতৃত্বের ক্ষেত্রে তিনি চিরকাল এক উজ্জ্বল অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন।



















