রাজনৈতিক মহলে নতুন সূচনা এনেছে বিএনপির সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত, যেখানে বলা হয়েছে, এক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী পদে সর্বোচ্চ ১০ বছর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। এই বিষয়ে সংবিধানে সংশোধনী আনার প্রস্তাব পোষণ করেছে দলটি। মঙ্গলবার (২৪ জুন) রাতে গুলশানের বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সংগঠনের অভ্যন্তরে দীর্ঘদিনের আলোচনার পর জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল, সেটির প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ ও নেতারা বলছেন, এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে সময়ের সঙ্গে নবযাত্রার সূচনা।
বৈঠকে সালাহউদ্দিন আহমেদ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাম্প্রতিক আলোচনার রিপোর্ট তুলে ধরেন, যেখানে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিভিন্ন মত পোষণ করেছিল। প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ দুই পূর্ণ মেয়াদ হবে নাকি সর্বোচ্চ দুবার শপথ গ্রহণের ভিত্তিতে হবে, তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, এই মতবিরোধ দূর করা কঠিন, বরং এক ব্যক্তির জীবদ্দশায় মোট কত বছর প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন, সেটি নির্ধারণ করা উচিত।
সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রস্তাব দেয় একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির মত হলো, এই সংজ্ঞাকে আর একটু স্পষ্ট করে ১০ বছর মেয়াদ সীমাবদ্ধ করা হোক।
এছাড়াও বিএনপি সাংবিধানিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। তারা মনে করে, এটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং দেশের গণতান্ত্রিক চলাচলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর বিষয়েও বিএনপি ইতোমধ্যে একমত পোষণ করেছে। তারা নারীদের জন্য জাতীয় সংসদে ১০০ আসনের সংরক্ষিত আসনের পক্ষপাতী। এছাড়া সংসদের উচ্চকক্ষে সদস্য সংখ্যা ১০০ জনে উন্নীত করার প্রস্তাব নিয়েও দলের পজিশন ইতিবাচক।
বিএনপি প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রেও নতুন প্রস্তাব দিয়েছে। তারা দাবি করেছে, প্রধান বিচারপতি নির্বাচনের সময় জ্যেষ্ঠতম দুই বিচারকের মধ্যে যেকোনো একজনকে নিয়োগ দেওয়া উচিত।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপির এই সিদ্ধান্ত দেশের রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। সংবিধান সংস্কারে নতুন দিকনির্দেশনা পেলে আগামী দিনে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী হবে।
তবে এই প্রস্তাব কবে থেকে বাস্তবায়িত হবে এবং অন্যান্য দল কীভাবে এই প্রস্তাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে, তা সময়ই বলবে। এখন দেখার বিষয়, সরকারের পক্ষ থেকে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া আসে এবং জাতীয় ঐকমত্যে এর প্রভাব কতটুকু বিস্তৃত হয়।



















