জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণায় পোস্টার ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রাজনৈতিক প্রচারণায় যুগান্তকারী এই পরিবর্তনের ফলে প্রার্থীরা আর ঘর, দোকান বা গাছের গায়ে পোস্টার সাঁটাতে পারবেন না। পরিবর্তে ব্যানার, বিলবোর্ড, ফেস্টুন, হ্যান্ডবিল এবং সোশ্যাল মিডিয়াকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। তবে এসবের ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট শর্ত আরোপ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত কমিশন সভা শেষে এই তথ্য জানান নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ইসি সচিব মো. আখতার আহমেদ এবং জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অধিদপ্তরের (NID) মহাপরিচালক এসএম হুমায়ুন কবীর।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল জানান, "২০২৫ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের আচরণবিধির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই খসড়ায় পোস্টার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (RPO) সংশোধনের মাধ্যমে এই বিধিমালা কার্যকর করা হবে।
তিনি আরও বলেন, "প্রার্থীরা চাইলে বিলবোর্ড, ব্যানার, হ্যান্ডবিল এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচারণা চালাতে পারবেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, বিদেশি অর্থায়নে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা চালানো যাবে না।
নতুন আচরণবিধিতে "অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের" অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ, তাঁরা নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ আচরণে বাধ্য থাকবেন। সেই সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সদস্য বা সভাপতি থাকলে, নির্বাচনে অংশ নিতে হলে সেই পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে।
আচরণ বিধিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, প্রার্থীদের অযোগ্য ঘোষণার ক্ষেত্রে RPO-এর ৯১/ঙ ধারা কার্যকর করা হবে এবং এটি নতুনভাবে আচরণবিধির সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত হলো— প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় রিটার্নিং কর্মকর্তারা একটি ‘কমন প্ল্যাটফর্ম’ তৈরি করবেন। এই প্ল্যাটফর্মে সকল প্রার্থী তাঁদের ইশতেহার তুলে ধরার সুযোগ পাবেন। এর ফলে জনগণ সরাসরি সব প্রার্থীর পরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুতি এক জায়গায় জানতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশন মনে করছে, পরিবেশ রক্ষা, খরচ কমানো এবং ডিজিটাল প্রচারণা যুগে প্রবেশ করার জন্য পোস্টার নিষিদ্ধ করা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, এটি একদিকে যেমন ব্যয়সাশ্রয়ী, তেমনি পোস্টার সাঁটানো নিয়ে হিংসাত্মক ঘটনা ও সংঘাতের আশঙ্কাও কমাবে।
নতুন নির্বাচনী আচরণবিধি বাস্তবায়ন হলে এটি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। পোস্টারবিহীন প্রচারণা মানেই এক নতুন ধারার শুরু, যেখানে সোশ্যাল মিডিয়া, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এবং আধুনিক প্রযুক্তি হবে রাজনৈতিক প্রচারণার প্রধান মাধ্যম। তবে, এর সুষ্ঠু বাস্তবায়নই নির্ধারণ করবে এই পরিবর্তনের সফলতা।