ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ভয়াবহ উত্তেজনা: রাজস্থানে পাক রেঞ্জার আটক, কাশ্মিরে রক্তগরম সংঘর্ষ
ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক চিরকালই টানটান উত্তেজনার মধ্যে থাকলেও, সম্প্রতি সেই উত্তেজনা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। যুদ্ধংদেহী পরিস্থিতির মধ্যে ভারতের রাজস্থান সীমান্তে শনিবার (৩ মে) পাকিস্তানি রেঞ্জার্স বাহিনীর এক সদস্যকে আটক করেছে ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী (বিএসএফ)। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে জানা গেছে, ওই রেঞ্জার আন্তর্জাতিক সীমান্ত লঙ্ঘন করে ভারতের ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছিলেন।
বিএসএফ ওই পাক রেঞ্জারকে রাজস্থানের আন্তর্জাতিক সীমান্ত এলাকা থেকে আটক করে বর্তমানে রাজস্থান ফ্রন্টিয়ারের হেফাজতে রেখেছে। যদিও তার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি, তবে বিষয়টি ঘিরে কূটনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
এমন একটি সময় এই ঘটনা ঘটল, যখন মাত্র কিছুদিন আগেই, ২৩ এপ্রিল পাকিস্তান পাঞ্জাবের ফিরোজপুর সেক্টর থেকে বিএসএফ কনস্টেবল পূর্ণম কুমার সাহুকে আটক করেছিল। তিনি কৃষকদের পাহারার দায়িত্বে ছিলেন এবং অসাবধানতাবশত সীমান্ত পার হয়ে গিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়। সাধারণত এই ধরনের পরিস্থিতিতে উভয় দেশ একটি অনানুষ্ঠানিক সমঝোতার মাধ্যমে সৈন্যদের ফেরত দেয়। কিন্তু এবারে পাকিস্তান সাহুকে এখনো ফেরত দেয়নি, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
কাশ্মিরে ভয়ঙ্কর সংঘর্ষ: ‘বিনা উসকানিতে’ হামলার অভিযোগ
পাকিস্তানি রেঞ্জার আটক হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি)। এনডিটিভির বরাতে জানা গেছে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বিনা উসকানিতে গুলি চালাতে শুরু করে এলওসির বিভিন্ন সেক্টরে। এটি কোনও স্বতন্ত্র হামলা ছিল না; বরং বিগত ১০ দিন ধরে চলা সীমান্ত উত্তেজনার ধারাবাহিকতার অংশ বলে মনে করা হচ্ছে।
কাশ্মিরের কুপওয়ারা, বারামুলা, পুঞ্চ, রাজৌরি, মেন্ধর, নৌশেরা, সুন্দরবানি ও আখনুর সেক্টরে একযোগে এই গুলিবর্ষণ চলে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর একাধিক সূত্র জানায়, সীমান্তের ওপার থেকে ব্যাপক গুলিবর্ষণের জবাবে ভারতও ‘উপযুক্ত ও কঠোর’ প্রতিক্রিয়া জানায়। তবে এখনো পর্যন্ত কোনও পক্ষের প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সীমান্তে এমন বৃহৎ মাত্রার সংঘর্ষ বহুদিন পর দেখা গেল। এই সংঘর্ষে একসঙ্গে অনেক পাক পোস্ট অংশ নিয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক আরও অবনতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
কূটনৈতিক সংকট ও প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনাগুলো এমন এক সময় ঘটছে, যখন দুই দেশের মধ্যে সংলাপের কোনও কার্যকর উদ্যোগ নেই। পাকিস্তান সাহুকে ফেরত না দিয়ে কূটনৈতিক সংকেত দিয়েছে যে, তারা বর্তমানে কঠোর অবস্থানে আছে। ভারতের পক্ষ থেকেও রেঞ্জারকে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই ঘটনার ওপর নজর রাখছে এবং সেনা সদস্যদের সর্বোচ্চ প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। রাজস্থান ও কাশ্মির সীমান্তে নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে এবং ড্রোন, স্যাটেলাইট নজরদারি প্রযুক্তি ব্যবহারের মাত্রাও বাড়ানো হয়েছে।
উত্তেজনার নতুন মোড়
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন করে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সীমান্তে রক্তগরম পরিস্থিতি, সৈন্য আটক এবং গুলিবর্ষণের মতো ঘটনাগুলো দুই দেশের কূটনৈতিক ও সামরিক নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন ডেকে আনতে পারে। এমন অবস্থায় বিশ্ব সম্প্রদায় পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে, কারণ এ ধরনের ঘটনা আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে।



















