ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কড়া বার্তা দিলো যুক্তরাজ্য
মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাজ্য। গাজায় ফিলিস্তিনি শিশুদের ওপর ইসরায়েলি হামলা এবং পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি স্থাপন নিয়ে অবশেষে সরাসরি পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটি। মঙ্গলবার (২০ মে) ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ঘোষণা দিয়ে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি জানিয়ে দেন, ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান মুক্ত বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করা হয়েছে এবং তেলআবিভে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অবৈধ বসতি স্থাপনই সিদ্ধান্তের মূল কারণ
ডেভিড ল্যামি বলেন, “পশ্চিম তীরে অবৈধভাবে বসতি স্থাপন আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। এসব কর্মকাণ্ডের জন্য যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।”
এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্য তিনজন ব্যক্তি এবং চারটি ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যারা সরাসরি পশ্চিম তীরে সহিংসতা এবং দখলদারিত্বে জড়িত বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের মানবিক উদ্বেগ
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারও এক আবেগঘন বিবৃতিতে জানান, “গাজায় ইসরায়েলি গোলাবর্ষণে ফিলিস্তিনি শিশুদের মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি জরুরি এবং সব জিম্মিদের মুক্তি দিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “শিশুদের এমন দুর্ভোগ এখন অসহনীয় হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এখনই জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া।”
আন্তর্জাতিক মহলের চাপ ও সমালোচনা
এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের একদিন আগেই যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং কানাডা যৌথ বিবৃতিতে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের সমালোচনা করেছিল। যুদ্ধবিরতির দাবিতে আন্তর্জাতিক চাপ দিন দিন আরও বাড়ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকেও চাপ আসছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করতে।
ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞার কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “এই সিদ্ধান্ত নতুন কিছু নয়। যুক্তরাজ্যের বর্তমান সরকার আগেই বাণিজ্য আলোচনায় বিরতি দিয়েছিল। এখনকার নিষেধাজ্ঞা একতরফা ও দুঃখজনক।”
তারা হুঁশিয়ার করে আরও বলে, “এধরনের চাপ বা নিষেধাজ্ঞা আমাদের লক্ষ্য অর্জনে বাধা হতে পারবে না। ইসরায়েল তার নিরাপত্তা রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকবে।”
নিষেধাজ্ঞার ব্যাপক প্রভাব
বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্রিটেনের এই নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক মঞ্চে একটি স্পষ্ট বার্তা। এটি শুধু কূটনৈতিকভাবে নয়, অর্থনৈতিক দিক থেকেও ইসরায়েলকে চাপে ফেলতে পারে। বিশেষ করে ইউরোপীয় দেশগুলো যদি একই পথে হাঁটে, তাহলে ইসরায়েলের ওপর চাপ বহুগুণে বাড়বে।
যুক্তরাজ্যের এই পদক্ষেপ একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে, যেখানে পশ্চিমা শক্তিগুলোও এখন ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে শুরু করেছে। গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক চাপ যেভাবে বাড়ছে, তাতে করে খুব শিগগিরই একটি নতুন কূটনৈতিক বাস্তবতার মুখোমুখি হতে পারে ইসরায়েল।



















