এ সপ্তাহেই ইরানে হতে পারে মার্কিন হামলা

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্র কি ইরানের মাটি ছুঁতে যাচ্ছে? পারমাণবিক উত্তেজনার মাঝেই হামলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে মার্কিন বাহিনী। ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন ইঙ্গিত দিচ্ছে, এই সপ্তাহেই ঘটতে পারে বড় ধরনের সংঘর্ষ, যা বদলে দিতে..

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমশই চড়া হচ্ছে। ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের ইঙ্গিত দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যা ঘটতে পারে এ সপ্তাহের মধ্যেই। প্রভাবশালী মার্কিন গণমাধ্যম ব্লুমবার্গের বরাত দিয়ে 'দ্য টাইমস অব ইসরায়েল' জানিয়েছে, এই হামলা নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের ভেতরে চলছে উচ্চপর্যায়ের আলোচনাও।

ব্লুমবার্গ বলছে, তারা এমন কয়েকজন সূত্রের সঙ্গে কথা বলেছে যারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান ইস্যুতে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। ওই সূত্রগুলো জানিয়েছে, মার্কিন কর্মকর্তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করে সামরিক হামলার পরিকল্পনা চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। এমনকি, কিছু কিছু সূত্র দাবি করছে, এই সপ্তাহান্তেই শুরু হতে পারে হামলা।

হোয়াইট হাউস ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজে ব্যক্তিগতভাবে এই সম্ভাব্য হামলার পরিকল্পনাকে নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছেন। তবে এখনো তিনি চূড়ান্ত সামরিক নির্দেশনা জারি করেননি।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেও ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন,
"আমি এটি করতেও পারি, আবার নাও করতে পারি। তবে সামনের সপ্তাহটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। এমনকি তার আগেই সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সময় নিচ্ছেন এ কারণে যে, তিনি এখনো আশাবাদী— হয়তো ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করতে সম্মত হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি হামলা বাস্তবায়িত হয়, তাহলে ইরানের ‘ফোর্ডো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র’ হতে পারে মার্কিন আগ্রাসনের মূল লক্ষ্য। এ স্থাপনাটি পাহাড়ের নিচে নির্মিত এবং প্রচলিত বোমায় এর ক্ষতি করা প্রায় অসম্ভব।
তাই বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘বাঙ্কার বাস্টার’ নামে পরিচিত বিশেষ বোমা ব্যবহার করেই হয়তো এ স্থাপনাকে টার্গেট করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।

ফোর্ডোর মতো স্থাপনাগুলো শুধুমাত্র ইরানের পরমাণু সক্ষমতা নয়, বরং তাদের কৌশলগত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থারও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সেখানেই প্রথম আঘাত হানলে তা ইরানকে শুধু সামরিকভাবে নয়, মনস্তাত্ত্বিকভাবেও দুর্বল করে দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় ইরান থেকেও এসেছে দৃঢ় হুঁশিয়ারি।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন:
"আমরা কখনো আত্মসমর্পণ করবো না। যুক্তরাষ্ট্র যদি হামলা চালায়, তার ফলাফল হবে ভয়াবহ ও অপূরণীয়।

ইরানের এই কঠোর মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়েছে, তারা এই সংঘাতে পিছিয়ে পড়তে রাজি নয়। মধ্যপ্রাচ্যে তাদের প্রভাব, শিয়া অক্ষের নেতৃত্ব এবং প্রতিরক্ষা সক্ষমতা নিয়ে তারা এক ইঞ্চিও ছাড় দিতে রাজি নয়।

যুক্তরাষ্ট্র-ইরান টানাপোড়েন নতুন নয়। তবে এই মুহূর্তের উত্তেজনা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক। পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে কেন্দ্র করে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষের আশঙ্কা অনেকটাই বাস্তব রূপ নিতে চলেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, একবার যদি সংঘাত শুরু হয়, তাহলে তা শুধু ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এতে যুক্ত হতে পারে ইসরায়েল, সৌদি আরব, লেবাননের হিজবুল্লাহ এমনকি পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোও।

যুক্তরাষ্ট্র যদি সত্যিই ইরানে হামলা চালায়, তবে সেটি শুধু দুটি দেশের যুদ্ধ হবে না — এটি রীতিমতো একটি আঞ্চলিক যুদ্ধের দিকে ধাবিত হতে পারে। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে পুরো বিশ্ব, আর তেহরানের চোখে এখন শুধু প্রতিরোধ আর প্রতিশোধ।

Ingen kommentarer fundet


News Card Generator