চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা থানাধীন ঝাঝরি গ্রামে ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক ঘটনা—যেখানে বৈদ্যুতিক ফাঁদে জড়িয়ে প্রাণ গেল এক তরুণ কৃষকের। রোববার (২২ জুন) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে গ্রামীণ জনপদের সেই শান্ত সকালের দৃশ্য মুহূর্তেই পরিণত হয় কান্নার রোল আর স্তব্ধতার মাঝে।
নিহত কৃষক চান মিয়া (৩০), ঝাঝরি গ্রামের মাঝেরপাড়ার বাসিন্দা সায়েব আলীর ছেলে। সকালের আলো ফোটার আগেই মাঠের কাজ শুরু করতে বের হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ভাগ্য যে এদিন তার জন্য ছিল নির্মম এক পরিণতির পূর্বলিখন—তা কে জানত?
চান মিয়া প্রতিদিনের মতো এদিনও কেরু অ্যান্ড কোম্পানির লিজ নেয়া একটি পুকুরের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। কিন্তু এই পুকুরটিই যে তার জীবনের শেষ গন্তব্য হয়ে দাঁড়াবে, তা ছিল কল্পনাতীত।
এ পুকুরটি মাছ চাষের জন্য লিজ নিয়েছেন একই গ্রামের আব্বাস আলী, পিতা রজব আলী। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিনি মাছ চুরি ঠেকাতে এবং বন্য প্রাণীর হাত থেকে পুকুর রক্ষায় চারপাশে জিআই তার দিয়ে ঘিরে রেখেছিলেন। তবে সমস্যার শুরু এখানেই—তারে অবৈধভাবে যুক্ত করা হয়েছিল বৈদ্যুতিক সংযোগ।
চান মিয়া বিষয়টি না জেনে অসাবধানতাবশত সেই বিদ্যুতায়িত জিআই তারে হাত দেন। মুহূর্তেই তিনি মারাত্মকভাবে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু ঘটে।
ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় দর্শনা থানা পুলিশ। ওসি মুহম্মদ শহীদ তিতুমীর জানান, “মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মৃত্যুর কারণ ও ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, পুকুর পাহারায় বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার সম্পূর্ণ অবৈধ ও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। যারা এমন কাজ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই ধরনের বিদ্যুতায়িত তার গ্রামে বহু জায়গাতেই পুকুর বা জমির চারপাশে বসানো হয়ে থাকে। বৈদ্যুতিক নিরাপত্তার অভাব, নিয়মবহির্ভূত সংযোগ এবং কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে যেকোনো সময় ঘটতে পারে আরও বড় দুর্ঘটনা।
চান মিয়ার অকাল মৃত্যু যেন সেই ভয়ংকর বাস্তবতার নগ্ন উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে মাছ চুরির আতঙ্ক, অন্যদিকে জীবন রক্ষার ঝুঁকি—এই দুইয়ের মাঝে পড়ে প্রাণ হারালেন এক কৃষক।
চান মিয়ার পরিবার এখন শোকে স্তব্ধ। তাঁর স্ত্রী, সন্তান ও মা-বাবা কীভাবে এই শূন্যতা কাটিয়ে উঠবে, তা কেউ জানে না। পাড়া-প্রতিবেশীদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে পুরো গ্রাম।
গ্রামের একজন বয়স্ক মানুষ জানান, চান খুব ভালো ছেলে ছিল। মাঠে কাজ করত, কারও সঙ্গে ঝামেলা করত না। এমন মৃত্যু তার প্রাপ্য ছিল না।
চান মিয়ার মৃত্যু শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়—এটি একটি অদক্ষতা, অবহেলা ও আইন অমান্যের ফলাফল। এখন সময় হয়েছে সচেতন হবার, আইন প্রয়োগের এবং গ্রামাঞ্চলে এমন বিপজ্জনক ব্যবস্থা বন্ধ করার।
প্রশাসনের উচিত, অবিলম্বে এসব অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া, যেন আর কোনো চান মিয়া অকালে বিদায় না নেন।