বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে ৮১ হাজার কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করেছে। এর মানে হলো, খেলাপি ঋণগুলো আর ব্যাংকের মূল খাতায় সংরক্ষিত থাকবে না, বরং এভাবে বিশাল অঙ্কের ঋণ আড়াল করা হয়েছে। অর্থাৎ, এই ঋণগুলো আদায়যোগ্য নয়, কিন্তু তা ব্যাংকের ব্যালান্স শিটে আর দেখানো হবে না। বর্তমানে দেশে ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে ৫৪টি ব্যাংক গত ২১ বছরে ঋণ অবলোপন করেছে, এবং এর মধ্যে শীর্ষ ১০ ব্যাংকই অর্ধেকের বেশি খেলাপি ঋণ অবলোপন করেছে।
বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা মনে করছেন, ঋণ অবলোপন বৃদ্ধির কারণে প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ গোপন রাখা হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে ব্যাংক খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ২০.২০ শতাংশ।
এছাড়া, ঋণ অবলোপন নীতিমালায় শিথিলতার কারণে ব্যাংকগুলো বেশি ঋণ অবলোপন করতে ঝুঁকছে। ব্যাংক খাতে ঋণ বিতরণে বড় ধরনের অনিয়ম হয়েছে এবং সেগুলোকেই এভাবে আড়াল করা হয়েছে। এই ঋণ অবলোপন পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর মূল খাতায় খেলাপি ঋণ কম দেখানো যায়, যদিও ব্যাংকের দায় থেকে যায়।
ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ঋণ অবলোপন করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক, যা একাই ৮ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা অবলোপন করেছে। এর পরেই রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ঋণ অবলোপন পদ্ধতিতে এভাবে খেলাপি ঋণ আড়াল করার কারণে প্রকৃত ঋণ পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক অবস্থার সত্যিকার চিত্র জনগণের কাছে পৌঁছাচ্ছে না, যা দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।



















