রাজনৈতিক সংকটে অস্থির জাতি, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দাবি আমীর খসরুর
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্গনে এক অজানা শঙ্কা বিরাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরি। শনিবার (১৮ মে) রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “জাতি এখন এক অজানা আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে। নির্বাচন যত বিলম্বিত হচ্ছে, দেশ ততই অস্থিতিশীলতার দিকে ধাবিত হচ্ছে।”
তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, "ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে।" তার মতে, বর্তমান সরকার অন্তর্বর্তীকালীন হলেও তারা নির্বাচিত সরকারের মতো আচরণ করছে, যা গণতন্ত্রের জন্য চরম হুমকি।
‘স্বৈরাচারকে বিদায় দিয়েও শান্তি নেই’
আমীর খসরু বলেন, “সারাদেশের মানুষ মিলে স্বৈরাচারকে বিদায় করেছে। আমরা ভেবেছিলাম এরপর গণতান্ত্রিক ধারায় দেশ পরিচালিত হবে। কিন্তু আজ আমরা সেই প্রত্যাশা থেকে বহু দূরে। সরকার বলছে সব কিছু ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে হবে, সংস্কার হবে। কিন্তু সেই ঐকমত্য কোথায়? কারা দিচ্ছে সেই সিদ্ধান্ত?”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকার বারবার সংস্কারের কথা বললেও তা একতরফাভাবে বাস্তবায়ন করছে। গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো জনগণের মতামত, অথচ সেই মতামতের প্রতিফলন কোনো প্রক্রিয়াতেই দেখা যাচ্ছে না।
‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরা যায় না’
বিএনপির এই বর্ষীয়ান নেতা বলেন, “বর্তমান সরকার একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাদের একমাত্র দায়িত্ব ছিল অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করে ক্ষমতা একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে হস্তান্তর করা। কিন্তু সরকার উল্টো সেই দায়িত্ব পালন না করে নিজেকে স্থায়ী করে তোলার চেষ্টা করছে।”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “দেশে করিডর ইস্যু, বিনিয়োগ সম্মেলন, বন্দর ব্যবহারের চুক্তি—এসব সিদ্ধান্ত কার অনুমতিতে নিচ্ছে সরকার? অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হয়ে এইসব চুক্তি করার অধিকার তাদের কে দিয়েছে?”
দক্ষিণের মেয়র ইস্যুতে আদালতের আদেশ মানা হচ্ছে না
ব্রিফিংয়ে আমীর খসরু দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সংক্রান্ত এক ইস্যু তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “এই ইস্যুতে আদালতের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু সেই আদেশ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বরং প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ব্যক্তি দায়িত্ব পাচ্ছেন যাদের পরিচয় অজানা। তারা কারা? কাদের হয়ে কাজ করছে?”
এ সময় তিনি বলেন, “দেশে এখন জনগণের সিদ্ধান্তে নয়, কিছু অদৃশ্য শক্তির ইচ্ছা বাস্তবায়িত হচ্ছে। এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না। সংস্কারের নামে জনগণকে ধোঁকা দেওয়া হচ্ছে।”
নির্বাচন না হলে ভয়াবহ অনিশ্চয়তা আসবে: সতর্কবার্তা
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরি বলেন, “বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট দিন দিন আরও জটিল হচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া এই সংকট কাটবে না। যদি ডিসেম্বরের মধ্যেও নির্বাচন না হয়, তাহলে দেশ এক ভয়াবহ অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হবে। জাতির জন্য এটি হবে অত্যন্ত ক্ষতিকর।”
শেষ কথা: জনগণ প্রস্তুত, এখন প্রয়োজন সময়মত নির্বাচন
তিনি জানান, “জনগণ পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু সেই সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। একটি নির্বাচিত, গ্রহণযোগ্য সরকার গঠনের জন্য যে নির্বাচন প্রয়োজন—তা শুধু সময়মত নয়, বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে। ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।”
আমীর খসরুর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, বিএনপি নির্বাচন ঘিরে একটি সময়সীমা নির্ধারণে অনড় অবস্থানে রয়েছে। অন্যদিকে সরকারের আচরণে অসন্তুষ্টি এবং আদালতের আদেশ অমান্য করার অভিযোগও রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়াবে বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন।