ডিসেম্বরে নির্বাচন না হলে সরকারের বি'রু'দ্ধে ক'ঠো'র আ'ন্দো'লনের হুঁ'শি'য়ারি বিএনপির..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
সরকার যদি আগামী জুনের মধ্যে নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না দেয়, তাহলে জুলাই থেকেই মাঠে নামবে বিএনপি। এক মাসের আলটিমেটাম দিয়ে জানিয়ে দিল—ডিসেম্বরের মধ্যেই চাই জাতীয় নির্বাচন, নইলে শুরু হবে দুর্বার আন..

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফের উত্তেজনার ছোঁয়া। অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাবনা থাকলেও, বিএনপি বলছে, নির্বাচন হতে হবে এই বছরের ডিসেম্বরে। দলটি আগামী এক মাসের সময়সীমা বেঁধে সরকারকে পুনর্বিবেচনার সুযোগ দিচ্ছে। এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন প্রসঙ্গে কোনো সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না এলে, জুলাই থেকেই মাঠে কঠোর আন্দোলনে নামবে বিএনপি

বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক জানিয়েছেন, আগামী জুলাই-আগস্টের মধ্যেই রাজনৈতিক পরিস্থিতি একটি স্পষ্ট মোড় নিতে পারে। যদিও গত বুধবার বিএনপির ঢাকার সমাবেশ থেকেই দলের শীর্ষ নেতারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন—জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যেই হতে হবে, এর বাইরে কিছু তারা ভাবছেন না

বিএনপির একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, বড় সমাবেশের পর আপাতত কোনো কর্মসূচির ঘোষণা নেই। সামনে পবিত্র ঈদুল আজহা, তাই জুন মাসটিকে অপেক্ষার সময় হিসেবেই ব্যবহার করতে চায় দলটি। তবে ঈদের পর, জুলাই থেকে ধারাবাহিকভাবে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা আসবে, যা চলবে আগস্ট পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে যদি সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন নিয়ে কোনো ইতিবাচক বার্তা না আসে, তবে আন্দোলন আরও কঠিন ও মুখোমুখি পর্যায়ে যাবে বলেই দলটির নেতারা মনে করছেন।

গণ-অভ্যুত্থান দিবস ঘিরে উত্তাপ

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন হিসেবে বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জামায়াতে ইসলামি ও ইসলামী আন্দোলনসহ বেশ কিছু দল দিনটি ঘিরে বিরাট কর্মসূচির পরিকল্পনা করছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের ঘটনাকে স্মরণ করেই এ কর্মসূচি ঘোষণা হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “নির্বাচনের জন্য আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পলায়নের বর্ষপূর্তিতে অবশ্যই আমাদের কর্মসূচি থাকবে। কারণ, গণ-অভ্যুত্থানের মূল শক্তিই ছিল বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনের শরিকেরা।”

তিনি আরও জানান, জুলাই মাস থেকেই ধারাবাহিক কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলনের গতি বাড়ানো হবে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার পাশাপাশি জনগণকেও আন্দোলনের মূলধারায় সম্পৃক্ত করা হবে।

“সরকারের বিবেচনাবোধ জাগবে”—অপেক্ষায় বিএনপি

বিএনপির আরেক শীর্ষ নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আমরা আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করব। আমরা আরও কিছু সময় অপেক্ষা করব, যাতে সরকারের বিবেচনাবোধ জাগে। যত দ্রুত নির্বাচন হয়, ততই দেশের জন্য মঙ্গল।"

তিনি দাবি করেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যেভাবে বলেছেন, ‘শুধু একটি দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়’, তা সম্পূর্ণ সত্য নয়। বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনের শরিক এবং আরও অনেক দল ডিসেম্বরেই নির্বাচন চায়। তাই সরকারের একপক্ষীয় ব্যাখ্যায় দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা প্রতিফলিত হচ্ছে না।

রাজনৈতিক বিভাজন আরও গভীর?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার ও বিএনপির অবস্থান এখন স্পষ্টভাবে মুখোমুখি। বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদের মতে, বিএনপি ‘ডিসেম্বরে নির্বাচন’-এর দাবিতে অনড় থাকবে। কারণ, এই অবস্থান থেকে পিছু হটলে দলের দুর্বলতা প্রকাশ পাবে। অন্যদিকে অধ্যাপক ইউনূস বলছেন, নির্বাচন হবে জুনের মধ্যে, কিন্তু সেটা পূর্ববর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো সহজ হবে না। বরং তাকে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে, নইলে সেটিকে ব্যর্থতা হিসেবেই বিবেচনা করা হবে।

তিনি বলেন, এই সংস্কার যদি জন-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, তবে সরকারের ওপর আস্থাহীনতা আরও বাড়বে এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে।

মাঠে নেমে আসছে ছাত্র ও যুব শক্তি

মে মাসজুড়ে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল যৌথভাবে দেশের চার বিভাগ ও শহরে আটটি সেমিনার ও সমাবেশ করেছে, যার প্রধান লক্ষ্য ছিল তরুণ প্রজন্ম। গত বুধবার নয়াপল্টনে অনুষ্ঠিত বড় সমাবেশের মাধ্যমে এ কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হয়েছে

দলের নেতারা মনে করছেন, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবরের পর ঢাকায় এটিই ছিল সর্ববৃহৎ জমায়েত, যা বিএনপির সাংগঠনিক ও জনসমর্থনের শক্তি দেখিয়েছে। তবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কঠোর অবস্থান—“ডিসেম্বরে নির্বাচন হতেই হবে”—নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে

সব মিলিয়ে, বিএনপি তার আন্দোলন কৌশল নির্ধারণে জুন মাসটিকে ‘অপেক্ষা ও মূল্যায়নের সময়’ হিসেবে দেখছে। তবে জুলাই থেকে আন্দোলনের দ্বিতীয় ধাপে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান দিবস ঘিরে একাধিক দলের সম্ভাব্য কর্মসূচি এবং সরকারের প্রতিক্রিয়া মিলিয়ে আগামী মাসগুলোতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে চরম উত্তেজনা ও সংঘাতের সম্ভাবনা জোরালো হয়ে উঠছে।
এখন দেখার বিষয়—সরকার আদৌ নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে নমনীয় হবে কি না, নাকি রাজপথেই হবে ফয়সালার লড়াই।

No comments found


News Card Generator