ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন, নিক্কেই ফোরামে জানালেন ড. ইউনূস
টোকিও থেকে বিশেষ প্রতিনিধি:
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে স্পষ্ট ঘোষণা দিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি জানালেন, দেশের প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কার সম্পন্ন করেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচন ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
জাপানের রাজধানী টোকিওতে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘নিক্কেই ফোরাম: ৩০তম ফিউচার অব এশিয়া সম্মেলন-২০২৫’-এ মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এই ঘোষণা দেন।
আন্তর্জাতিক মঞ্চেই নির্বাচন ঘোষণা
২৯ মে, বৃহস্পতিবার সম্মেলনের বক্তব্য শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে একাধিক আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ও বিশ্লেষকের প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন,
"আমরা চাই না বাংলাদেশ আবার পুরনো ব্যর্থতার পথে ফিরে যাক। দরকার নতুন এক বাংলাদেশ। সেই নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে প্রথম পদক্ষেপ হবে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। আর সেই নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই হবে।"
এই ঘোষণায় উপস্থিত আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকর্মী, কূটনীতিক ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা বেশ আগ্রহ দেখান।
‘নতুন বাংলাদেশ’-এর স্বপ্ন ও তরুণদের প্রতি আস্থা
ড. ইউনূস তাঁর বক্তব্যে জোর দেন তরুণ সমাজের শক্তি ও সম্ভাবনার উপর। তিনি বলেন,
“বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই তরুণ। এই শক্তিকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে পারলেই সম্ভব একটি স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলা।”
তরুণদের নেতৃত্বে একটি উদ্ভাবনী, কর্মক্ষম ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি। পাশাপাশি জাপানসহ আন্তর্জাতিক বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোকে এই যাত্রায় পাশে থাকার আহ্বান জানান।
জাপানের সঙ্গে নতুন কূটনৈতিক আস্থার বার্তা
প্রধান উপদেষ্টা জানান, জাপান দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের নির্ভরযোগ্য বন্ধু। তিনি বলেন,
“নিক্কেই ফোরাম এশিয়ার ভবিষ্যতের আলোচনায় একটি উল্লেখযোগ্য প্ল্যাটফর্ম। এই ফোরামে অংশ নিয়ে বাংলাদেশকে নতুনভাবে তুলে ধরার সুযোগ পেয়ে আমি আনন্দিত।”
তিনি জাপান সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশের অবকাঠামো, প্রযুক্তি, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান উন্নয়নে আরও বিনিয়োগের অনুরোধ জানান।
চারদিনের জাপান সফরে ড. ইউনূস
বর্তমানে চারদিনের সফরে জাপানে অবস্থান করছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সফরের অংশ হিসেবে তিনি বিভিন্ন মন্ত্রী, ব্যবসায়ী নেতা এবং উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাময়িক সরকার আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে বার্তা দিতে চায়—দেশ এখন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথে অগ্রসর হচ্ছে।
ড. ইউনূসের জাপানে দেওয়া বক্তব্য শুধু একটি রাজনৈতিক ঘোষণা নয়, বরং এটি একটি কৌশলগত বার্তা—দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। এখন দেখার বিষয়, দেশে ফিরে এই বক্তব্যকে কীভাবে বাস্তব রূপ দেওয়া হয়।



















