ডিমপাড়া মুরগি এখন মোরগ!’ – টাঙ্গাইলের ঘরে ঘরে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে এক অভাবনীয় প্রকৃতি-নির্মিত বিস্ময়
টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ঘিওরকোল গ্রামের মধ্যপাড়ায় এমন একটি ঘটনা ঘটেছে যা একাধারে চাঞ্চল্যকর, রহস্যঘেরা ও শিক্ষণীয়। গ্রামের একজন প্রবীণ সাংবাদিক মো. আমজাদ হোসেন রতনের বাড়ির এক পোষা মুরগি, যা নিয়মিত ডিম দিত এবং বাচ্চা ফুটাত, হঠাৎ করেই আচরণ বদলেছে। এখন সেটি আর মুরগি নেই—পুরোদস্তুর মোরগে রূপ নিয়েছে! স্থানীয়ভাবে একে বলা হচ্ছে "লিঙ্গ বদলের মুরগি।"
আমজাদ হোসেন জানান, “প্রায় দেড় বছর ধরে আমরা এই মুরগিটিকে লালন-পালন করছি। সে নিয়মিত ডিম দিত এবং বাচ্চাও ফুটিয়েছে। কিন্তু কয়েকদিন আগে হঠাৎ মেয়ে এসে জানায়, মুরগিটি মোরগের মতো ডাকছে। তখন কাছ থেকে লক্ষ্য করে দেখি—ঝুঁটি বড় হয়ে উঠেছে, গলার স্বর বদলেছে, পালক শক্ত হয়েছে। এবং সবচেয়ে বড় ব্যাপার, গত প্রায় ১০ দিন ধরে সে আর ডিম দিচ্ছে না।”
তার স্ত্রী মোছা. লাখী তালুকদার বলেন, “এই মুরগিটি ঘরের সদস্যের মতো ছিল। ওর আচরণ, চলাফেরা—সব কিছু মেয়ে পাখির মতোই ছিল। কিন্তু এখন যেন পুরোপুরি বদলে গেছে। হাঁটার ভঙ্গি, ডাক—সবই মোরগের মতো।”
উৎসুক জনতার ভিড়, মুরগির চলাফেরা যেন মোরগের মহড়া!
ঘটনাটি গ্রামে রীতিমতো চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসছেন তালুকদার বাড়িতে—এ দৃশ্য নিজের চোখে দেখার জন্য। কেউ বলছেন ‘আল্লাহর কুদরত’, কেউ বলছেন ‘অলৌকিক ঘটনা’। কেউ আবার মোবাইলে ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে টিকটক, ফেসবুক, ইউটিউব মিলিয়ে হাজার হাজার মানুষ এই ‘ডিমপাড়া থেকে মোরগ হওয়া’ ঘটনার সাক্ষী হয়ে গেছেন।
বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা: ‘Spontaneous Sex Reversal’
এই ঘটনাটি সাধারণ মানুষের জন্য বিস্ময়কর হলেও চিকিৎসাবিজ্ঞান এটিকে অলৌকিক বলে মনে করে না। বরং একে বলা হয় Spontaneous Sex Reversal—অর্থাৎ স্বাভাবিকভাবেই লিঙ্গ পরিবর্তন হওয়া।
একজন অভিজ্ঞ প্রাণিচিকিৎসক জানান, “মুরগির শরীরে যদি কোনো কারণে ডিম্বাশয় বিকল হয়ে যায়, তখন শরীরের হরমোন ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং পুরুষ বৈশিষ্ট্য বিকশিত হতে শুরু করে। যেমন—ঝুঁটি বড় হওয়া, পালকের গঠন বদলে যাওয়া, ডাকের স্বরে পরিবর্তন এবং পুরুষসুলভ আচরণ।”
তিনি আরও বলেন, “এটি বিরল হলেও বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত ও ব্যাখ্যাযোগ্য একটি বিষয়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও এধরনের কিছু ঘটনা মাঝে মাঝে ঘটে থাকে, তবে সংখ্যায় খুবই কম।”
চিকিৎসা হয়নি, তবুও আলোচনায় ‘অলৌকিক’ ব্যাখ্যা
এখনও পর্যন্ত মুরগিটির কোনো চিকিৎসা বা ভেটেরিনারি চেকআপ করানো হয়নি। তবে স্থানীয় মানুষজন এটিকে অলৌকিক ঘটনা বলে ধরে নিচ্ছেন এবং বহু মানুষ ‘কবিরাজি’ ব্যাখ্যা দিচ্ছেন—যা আবার ফেসবুক ও ইউটিউবে ঝড় তুলেছে।
তবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, যদি মুরগিটির সুস্থতা নিশ্চিত করতে হয়, তাহলে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ হরমোনের এমন পরিবর্তন অনেক সময় রোগের লক্ষণও হতে পারে।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া: “প্রকৃতি নিজেই যেন খেলা করছে”
ঘিওরকোল গ্রামের মানুষজন বলছেন, “আমরা জীবনে এমন কিছু দেখিনি। ডিম দেওয়া একটি মুরগি এমনভাবে মোরগ হয়ে যাবে—এটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যেত না। প্রকৃতি মাঝে মাঝে এমন কিছু করে, যা সত্যিই বিস্ময়কর।”
এই ঘটনা শুধু একটি মুরগির শারীরিক পরিবর্তনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়—এটি প্রকৃতি ও বিজ্ঞানের সম্পর্ককে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। আবারও প্রমাণ হলো, প্রকৃতির হাতে অজস্র রহস্য লুকিয়ে আছে, যার উত্তর দিতে পারে কেবল বিজ্ঞান।