বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদ থেকে বরিশাল, চুয়াডাঙ্গা ও যশোর জেলার তিন শীর্ষ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে ধর্ষণের ভিডিও প্রকাশের হুমকি, অর্থ আত্মসাৎ ও চাঁদাবাজির মতো গুরুতর অভিযোগে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি।
বহিষ্কৃত নেতারা হলেন—বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মো. সবুজ আকন, চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সহ-সভাপতি তৌহিদুজ্জামান তৌহিদ এবং যশোর জেলা শাখার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম রাফা।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের যৌথ অনুমোদনের ভিত্তিতে এই বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের এই তিনজনের সঙ্গে কোনোরূপ সাংগঠনিক যোগাযোগ না রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
ধর্ষণ, প্রতারণা ও ভিডিও ফাঁসের হুমকির ভয়াবহ অভিযোগ
এই বহিষ্কারের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন যশোর জেলা ছাত্রদলের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহ-সম্পাদক সাইফুল ইসলাম রাফা। কুমিল্লার এক তরুণী শনিবার (২৪ মে) যশোর কোতোয়ালি থানায় তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ, অর্থ আত্মসাৎ এবং গোপনে ধারণ করা ভিডিও ফাঁসের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে ফেসবুকের মাধ্যমে ওই তরুণীর সঙ্গে রাফার পরিচয় হয়। বন্ধুত্বের সূত্র ধরে রাফা তার মোবাইল ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর সংগ্রহ করেন এবং বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একটি প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এই সম্পর্ককে পুঁজি করে তরুণীকে শারীরিক সম্পর্কের ফাঁদে ফেলেন এবং পরে গোপনে ধারণ করা ভিডিও দিয়ে ব্ল্যাকমেইল শুরু করেন। একই সঙ্গে তার কাছ থেকে অর্থ আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশের ছদ্মবেশে চাঁদাবাজির কাণ্ড
এই ঘটনার আগেই, ২০২৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নের চন্দ্রপাড়া এলাকায় এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে। স্থানীয় একটি জুয়ার আসরে ডিবি পুলিশের পরিচয়ে চাঁদাবাজির চেষ্টা চালান সবুজ আকন ও আরও একজন ছাত্রদল নেতা। জনতা সন্দেহ হলে তাদের ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয় এবং সেখানে তাদের মারধরও করা হয়।
ঘটনার সময় পুলিশের এক উপপরিদর্শকও উপস্থিত ছিলেন এবং পুরো বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনের নজরে আসে। এরপর থেকে সংগঠনের ভেতরে বিতর্কের ঝড় ওঠে এবং শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ দিন দিন জোরালো হতে থাকে।
ছাত্রদলে নীতি ও নেতৃত্ব সংকট?
বারবার এমন ঘটনায় ছাত্রদলের নেতৃত্ব ও নীতিগত অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ছাত্র রাজনীতিতে যারা দায়িত্বে রয়েছেন, তাদের আচরণ ও কর্মকাণ্ড রাজনৈতিক আদর্শের সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ—এ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে ছাত্রদলের ভেতরেই। সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকেই মনে করছেন, কিছু অসাধু নেতা সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন, যার দায় নিতে হচ্ছে পুরো দলকেই।
রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন হিসেবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের এই ধরনের ঘটনায় জড়িয়ে পড়া শুধু সংগঠনের জন্য নয়, দেশের ছাত্র রাজনীতির ভবিষ্যতের জন্যও অশনি সংকেত। কেন্দ্রীয় নেতাদের এই সিদ্ধান্ত হয়তো সময়োপযোগী, তবে শুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়া কতটা গভীরে যাবে—তা এখন সময়ই বলে দেবে।



















