ধেয়ে আসছে পাহাড়ি ঢল: বিপর্যস্ত হতে পারে সিলেট, সুনামগঞ্জ, শেরপুর ও নেত্রকোণা—চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১০৬ সেন্টিমিটার ওপরে!
বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আবারও ভয়াবহ বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আবহাওয়ার সাম্প্রতিক পূর্বাভাস বলছে, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সিলেট, সুনামগঞ্জ, শেরপুর এবং নেত্রকোণায় শুরু হতে পারে হঠাৎ পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাত। ভারতের মেঘালয় ও আসামে গত কয়েকদিনের টানা ভারী বর্ষণের কারণে উজান থেকে পানি বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে। এরই মধ্যে শেরপুরের চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১০৬ সেন্টিমিটার ওপরে পৌঁছে গেছে, যা স্থানীয়দের মধ্যে চরম উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
মঙ্গলবার (২০ মে) এই উদ্বেগজনক তথ্য নিশ্চিত করেছেন বেসরকারি আবহাওয়াবিষয়ক ওয়েবসাইট আবহাওয়া ডটকমের প্রধান আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ। তিনি বলেন, "২৪ ঘণ্টার মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুর ও নেত্রকোণা জেলা এবং সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার নদ-নদীতে পাহাড়ি ঢল আসার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। এতে আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হতে পারে।"
তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার থেকে বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে রংপুর, ময়মনসিংহ এবং সিলেট বিভাগের জেলাগুলোর ওপর দিয়ে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত অতিক্রম করবে। ফলে নদ-নদীর পানি অতি দ্রুত বাড়তে পারে এবং জনজীবন ভীষণভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল ১০টায় চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১০৬ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছিল। অথচ এর আগের রাত ১০টা পর্যন্ত এই পরিমাণ ছিল ৩৯ সেন্টিমিটার ওপরে। এক রাতেই পানির স্তর বেড়েছে প্রায় ৬৭ সেন্টিমিটার, যা স্থানীয়দের মধ্যে বন্যা-আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে।
এদিকে শেরপুরে গত চারদিন ধরে থেমে থেমে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে মঙ্গলবার ভোর থেকে মুষলধারে বৃষ্টিপাতের ফলে জেলার বিভিন্ন এলাকার নিচু অঞ্চলগুলোতে পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। স্থানীয় প্রশাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ সম্ভাব্য বন্যা মোকাবেলায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানা গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, উজানে ভারী বৃষ্টিপাত এবং পাহাড়ি ঢল একই সঙ্গে চলতে থাকলে আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শেরপুর, নেত্রকোণা, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে নিম্নাঞ্চলের গ্রামগুলো ইতোমধ্যেই ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
জনজীবনে শঙ্কা, প্রশাসন সতর্ক
স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জনগণকে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসকরা জানান, নদীর পানির উচ্চতা নজরদারিতে রাখা হচ্ছে এবং যেকোনো ধরনের জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
শেষ কথা: সতর্ক থাকুন, নিরাপদ থাকুন
যেহেতু পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে এবং আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী বন্যার সম্ভাবনা খুবই বাস্তব, তাই সংশ্লিষ্ট চার জেলার বাসিন্দাদের সতর্ক ও প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। উঁচু জায়গায় আশ্রয় নেওয়া, প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার ও ওষুধ মজুত রাখা, এবং স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ।