close
কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!
ঢাকার গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য এখন রীতিমতো নিয়মে পরিণত হয়েছে। সরকারি নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে বাস মালিক ও শ্রমিকরা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে।
পজ মেশিনে ১০ টাকার ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ১৫ টাকা!
ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন রুটে চলাচল করা প্রজাপতি পরিবহন ও বসুমতী পরিবহনের স্টাফরা কালশী থেকে খিলক্ষেত পর্যন্ত পজ মেশিনে নির্ধারিত ১০ টাকার ভাড়া এখন ১৫ টাকা আদায় করছে। একইভাবে খিলক্ষেত থেকে বনানী যাওয়ার ভাড়া ১০ টাকার স্থলে ১৫ টাকা, আর খিলক্ষেত থেকে কাকরাইল পর্যন্ত ২৫ টাকার বদলে ৩০ টাকা রাখা হচ্ছে।
এই অনিয়মের প্রতিবাদ করলে যাত্রীদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয়। শাহাদাৎ হোসেন নামে এক যাত্রী জানান, তিনি খিলক্ষেত থেকে মিরপুর ১০ নম্বর যাওয়ার সময় ২০ টাকা ভাড়া দাবি করলে ই-টিকিট দেখতে চান। তখন বাসের স্টাফরা জানান, "পজ মেশিন নেই, মালিক নিয়ে গেছে। আপনাকে এত কিছু বলার সময় নেই, পোষালে যান, না হলে নেমে যান।" বাধ্য হয়ে শাহাদাৎ ২০ টাকা পরিশোধ করেন।
ওয়েবিল নিষিদ্ধ হলেও চলছে অনিয়ম!
বাস মালিকদের কথিত ওয়েবিল ব্যবস্থার মাধ্যমে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। অথচ বিআরটিএ ২০২২ সালের ১০ আগস্ট ওয়েবিল ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। এর বদলে চালু করা হয়েছিল ইলেকট্রনিক টিকিটিং ব্যবস্থা (পজ মেশিন)। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, মালিক ও শ্রমিকদের অজুহাতে এই পদ্ধতি কার্যকর হচ্ছে না।
এক বাস চালক বলেন, "ওয়েবিল অনুসারে ভাড়া নেওয়ার নির্দেশ আছে মালিকের। তারা রেট ঠিক করে দিয়েছে। আমাদের কিছু করার নেই।"
ভাড়া তালিকা নেই, যাত্রীদের হয়রানি চরমে
সম্প্রতি ঢাকার বিভিন্ন রুটে ঘুরে দেখা গেছে, কোনো বাসেই নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা নেই। গত ৬ ফেব্রুয়ারি ই-টিকিটিং পদ্ধতি চালুর কথা থাকলেও বেশিরভাগ বাসে সেটি মানা হচ্ছে না। যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক জানান, প্রতিদিন ঢাকা শহরের যাত্রীরা ১ কোটি ৮২ লাখ ৪২ হাজার টাকা বাড়তি ভাড়া গুনছেন!
তিনি বলেন, "পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি ও ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধ করতে হলে প্রতিটি বাসকে কাউন্টারভিত্তিক ও ই-টিকিটিংয়ের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি ওয়েবিল চেকপয়েন্টে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে।"
বিআরটিএর প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতা
বিআরটিএর পরিচালক (অপারেশন) মীর আহমেদ তারিকুল ওমর বলেন, "আমরা সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি এবং পরিবহন খাতকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি।"
কিন্তু বাস্তবতা হলো, সঠিক তদারকির অভাবে ভাড়া নৈরাজ্য দিন দিন আরও বেড়ে চলেছে। যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা নিজেদের পকেট ভারী করছে।
যাত্রীদের করণীয় কী?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাড়া তালিকা প্রকাশ করা, ই-টিকিট বাধ্যতামূলক করা এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হলে এই অনিয়ম কমতে পারে। একইসঙ্গে যাত্রীদেরও সচেতন হতে হবে এবং অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানাতে হবে।
এখন দেখার বিষয়, সরকার ও বিআরটিএ সত্যিই এই সমস্যা সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা নেয় কি না, নাকি যাত্রীরা প্রতিদিন এভাবেই লুট হতে থাকবেন!
No comments found