ঢাকা পলিটেকনিক শিক্ষার্থীকে উ'ল'ঙ্গ করে নি'র্যাত'ন: ছাত্রদলের বিরুদ্ধে বি'স্ফোর'ক অভিযোগ, গ্রেপ্তারের দা'বিতে থানায়..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলামকে উলঙ্গ করে পেটানোর ঘটনায় উত্তাল পুরো ক্যাম্পাস। ছাত্রদল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে মামলা হলেও, প্রশাসনের নীরবতায় ক্ষুব..

ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলামকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে পুরো ক্যাম্পাস। ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অভিযোগ উঠেছে তাকে উলঙ্গ করে মারধর, ভিডিও ধারণ এবং প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার। যদিও থানায় মামলা হয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। প্রশাসনের এই নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আজ রবিবার (২৫ মে) ‘লংমার্চ টু তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা’ কর্মসূচি পালন করে।

সকাল ১১টা থেকে শিক্ষার্থীদের মিছিল শুরু হয় ঢাকা পলিটেকনিক ক্যাম্পাস থেকে। বেলা ১২টায় মিছিলটি পৌঁছায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায়। এরপর থেকেই শিক্ষার্থীরা সেখানে অবস্থান কর্মসূচিতে বসেন। এই প্রতিবাদ কর্মসূচি পরিণত হয় আমরণ অনশনে। দাবি একটাই—অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে।

রাকিবুল ইসলাম নামের ওই শিক্ষার্থী ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের তৃতীয় সেমিস্টারে পড়াশোনা করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, “১৮ মে দুপুরে ছাত্রদলের কিছু সিনিয়র নেতাকর্মী আমার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন চেক করে এবং বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়। রাত আনুমানিক ৯টার দিকে ২৩-২৪ সেশনের ৮-১০ জন ছাত্র আমার রুমে ঢুকে জোরপূর্বক আমাকে নিয়ে যায়। এরপর একটি নির্জন কক্ষে নিয়ে তারা আমাকে উলঙ্গ করে শারীরিক নির্যাতন করে এবং সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে।”

এই ঘটনায় রাকিবুল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তিনি যাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের কথা বলেন, তারা হলেন: সৈকত (ইলেকট্রনিক্স), স্বাধীন (ইলেকট্রিক্যাল), ফয়েজ (সিভিল), নাফিউর রহমান (ইলেকট্রনিক্স), অনিক (ইলেকট্রনিক্স), সচিন (ইলেকট্রিক্যাল), মুন্না (কম্পিউটার), মেহেদী (মেকানিক্যাল), ও নিজুম (মেকানিক্যাল)। প্রত্যেকেই পলিটেকনিকের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের এক প্রতিনিধি দল বর্তমানে থানার ভেতরে পুলিশের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন। তারা জানায়, “আলোচনার ফলাফলের ভিত্তিতে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করব। যদি অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে প্রশাসন গড়িমসি করে, তবে আমরা আরও কঠোর আন্দোলনে যাব।”

নির্যাতনের শিকার রাকিবুলের দাবি, এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হলে পুরো ক্যাম্পাস নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে। তিনি বলেন, “আমার সঙ্গে যা হয়েছে, তা অন্য কারও সঙ্গে যেন না ঘটে—সেই দাবি নিয়েই আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু মামলার পরেও কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় আমরা হতাশ।"

অন্যদিকে ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা বলছেন, ‘শুধু রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে যদি কেউ এভাবে একজন শিক্ষার্থীকে উলঙ্গ করে মারধর করে এবং ভিডিও ধারণ করে, আর তবুও প্রশাসন চুপ থাকে—তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা কোথায়?’

থানার সামনে অবস্থানরত শতাধিক শিক্ষার্থী হাত প্ল্যাকার্ডে লিখেছে—‘উলঙ্গ করে নির্যাতনকারীদের গ্রেপ্তার করো’, ‘শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস চলবে না’, ‘ছাত্র রাজনীতির নামে অপরাধ চলবে না’—এমন নানা স্লোগান।

তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা ফিরে যাবেন না। একজন শিক্ষার্থী বলেন, “আজ রাকিবুল, কাল আপনি হতে পারেন। অপরাধী যেই হোক, তাকে শাস্তি পেতেই হবে। আর পুলিশ যদি ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে ছাত্রসমাজই জবাব দেবে।”

পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাওয়া যায়নি। তবে থানা সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগের তদন্ত চলছে এবং প্রয়োজনে অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হতে পারে।


এই ঘটনা শুধু একটি শিক্ষার্থীর উপর নির্যাতনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়—এটি দেশের ছাত্র রাজনীতির অনিয়ন্ত্রিত ও সন্ত্রাসী চেহারার নগ্ন প্রকাশ। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ, এবং ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিয়ে তৈরি হয়েছে এক ঘনীভূত সংকট, যার সমাধান এখনই জরুরি।

Ingen kommentarer fundet


News Card Generator