ঢাবির নিয়োগ আইনে পরিবর্তন: কার জন্য বিশেষ সুবিধা?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) নিয়োগ সংক্রান্ত নিয়মে পরিবর্তন এনে একজন নির্দিষ্ট কর্মকর্তার পদোন্নতির পথ সুগম করার অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় সম্প্রতি নেওয়া এক সিদ্ধান্তকে ঘিরে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিসের সহকারী রেজিস্ট্রার সুরাইয়া ইয়াসমিন কবিতার পদোন্নতি নিশ্চিত করতেই আইনের সংশোধন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মকর্তা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দাবি করছে, এই পরিবর্তন কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য নয়, বরং যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ার কারণে এটি করা হয়েছে।
আইনের আগের ও বর্তমান অবস্থা
আগে ঢাবির ডেপুটি রেজিস্ট্রার নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী, প্রার্থীদের—
✔ ন্যূনতম স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে।
✔ শিক্ষাজীবনের কোনো স্তরেই তৃতীয় বিভাগ গ্রহণযোগ্য নয়।
✔ প্রশাসনিক কাজে ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
✔ অভ্যন্তরীণ প্রার্থীদের জন্য ন্যূনতম ১০-১২ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
কিন্তু গত ২৫ ফেব্রুয়ারির সিন্ডিকেট সভায় এই নিয়ম পরিবর্তন করে বলা হয়েছে, ‘অভ্যন্তরীণ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে যেকোনো একটি শর্ত শিথিলযোগ্য।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এ ধরনের সিদ্ধান্ত এবারই প্রথম নেওয়া হলো।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বিতর্ক
ঢাবির রেজিস্ট্রার অফিসের ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে—
✔ বেতন স্কেল: ৫০,০০০-৭১,২০০ টাকা।
✔ যোগ্যতা: ন্যূনতম দ্বিতীয় বিভাগসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি।
✔ ১৪ বছরের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা, তবে অভ্যন্তরীণ প্রার্থীদের জন্য শর্ত শিথিলযোগ্য।
এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পরই বিতর্ক আরও তীব্র হয়। অভিযোগ রয়েছে, এই পরিবর্তন মূলত সুরাইয়া ইয়াসমিন কবিতার জন্য করা হয়েছে, কারণ পূর্বের নিয়ম অনুসারে তিনি এই পদে আবেদন করতে পারতেন না।
অভিযোগ ও প্রতিক্রিয়া
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডেপুটি রেজিস্ট্রার জানান, সুরাইয়া ইয়াসমিন কবিতা সহকারী রেজিস্ট্রার পদে মাত্র দুই বছর কর্মরত আছেন, অথচ ডেপুটি রেজিস্ট্রার হতে হলে কমপক্ষে ৫-৬ বছরের অভিজ্ঞতা লাগার কথা। তার শিক্ষাজীবনেও দ্বিতীয় শ্রেণির শর্ত পূরণ হয় না। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়ার শর্ত শিথিল করার পর তিনি এখন আবেদন করতে পারবেন।
এ প্রসঙ্গে ঢাবির মুখপাত্র ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা বলেন,
“এই সিদ্ধান্ত যদি নেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে তা নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য নয়। কখনো কখনো যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ার কারণে কিছু শর্ত শিথিল করা হয়।”
ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন,
“কোনো ব্যক্তিকে টার্গেট করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এটি সাধারণ নীতির অংশ।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশের শীর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ সংক্রান্ত এ ধরনের পরিবর্তন প্রশাসনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষ করে, যখন কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির সুবিধার জন্য আইন পরিবর্তনের অভিযোগ ওঠে, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত যোগ্যতার মূল্যায়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক নিয়োগে স্বচ্ছতা বজায় রাখার বিষয়ে শঙ্কার সৃষ্টি করে।
ঢাবির এই নিয়োগ সংক্রান্ত পরিবর্তন ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার পদোন্নতি ঘিরে বিতর্ক থামছে না। প্রশাসন যদিও দাবি করছে, এটি সাধারণ একটি সিদ্ধান্ত, তবে অনেকেই মনে করছেন, নিয়োগ বিধি পরিবর্তনের আসল কারণ হলো নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে সুবিধা দেওয়া। এখন দেখার বিষয়, এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবিষ্যতে কী অবস্থান নেয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কী প্রতিক্রিয়া দেখায়।