ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী ও স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহরিয়ার সাম্য (২৫) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হওয়ার ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা।
ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার (১৩ মে) রাত সাড়ে ১২টার দিকে। রক্তাক্ত অবস্থায় সাম্যকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হত্যাকাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়তেই মধ্যরাতে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা। রাত ১টা ৫০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছাত্রদলের একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন সংগঠনের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির। তারা “ক্যাম্পাসে লাশ পড়ে, প্রশাসন কী করে?” স্লোগান দিতে থাকেন।
একই সময়, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) নেতাকর্মীরাও মিছিল নিয়ে ঢাবি উপাচার্যের বাসভবনের দিকে অগ্রসর হন। পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। প্রশাসনের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে তারা ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাহীনতার চিত্র তুলে ধরেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. ফারুক জানান, চিকিৎসকরা সাম্যকে মৃত ঘোষণা করেছেন। মৃত্যুর কারণ হিসেবে ধারালো অস্ত্রের আঘাতেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণকে দায়ী করেছেন তারা।
পুলিশ জানায়, ঘটনার সময় সাম্য তার মোটরসাইকেল চালিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি বাইকের সঙ্গে তার ধাক্কা লাগে। এতে সাম্য ও অপর বাইকের আরোহীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি এবং হাতাহাতি শুরু হয়। এক পর্যায়ে দুর্বৃত্তরা সাম্যকে ডান পায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যায়।
ঘটনার পরপরই তদন্তে নামে পুলিশ। রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দুইজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের নাম-পরিচয় এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, কালীমন্দিরের পাশে তিন যুবক সাম্যর ওপর হামলা চালান। ঘটনার সময় হামলাকারীদের কেউ কেউও আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং তারা একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে গেলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে। তৃতীয় জন পালিয়ে যায়, তাকে ধরতে অভিযান চলছে।
এ ঘটনায় শিক্ষার্থী মহলে চরম উদ্বেগ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, “এটা শুধু সাম্যর হত্যাকাণ্ড নয়, বরং গোটা ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থার চরম ব্যর্থতা।”
ঢাবি প্রশাসন এ বিষয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
ঢাবি শিক্ষার্থী সাম্য হত্যাকাণ্ডে ছাত্ররাজনীতি উত্তাল হয়ে উঠেছে। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন, আর শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে ফুটে উঠেছে ন্যায়বিচারের দাবি। অপরাধীরা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, শিক্ষার্থীদের এই প্রতিবাদ যেন বার্তা দেয়—দায়মুক্তি নয়, চাই বিচার।



















