বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে নানা গুজব ছড়ানো হলেও দেশজুড়ে কোনো জরুরি অবস্থা জারি করা হয়নি বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেন, "বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি পেশাদার বাহিনী, যার কার্যক্রম সম্পর্কে সরকার এবং জনগণ সচেতন। কিছু মহল গুজব ছড়ানোর অপচেষ্টা করছে, তবে এসব বিভ্রান্তির কোনো ভিত্তি নেই।"
সোমবার ঢাকা সেনানিবাসে এক বিশেষ বৈঠকে (অফিসার্স অ্যাড্রেস) সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি এ কথা বলেন। ঢাকার বাইরের সেনা কর্মকর্তারাও অনলাইনের মাধ্যমে এই বৈঠকে অংশ নেন।
গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান
বৈঠকে সেনাপ্রধান বলেন, "দেশে গুজব ও অপপ্রচার ছড়িয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে। তবে সেনাবাহিনী দৃঢ়ভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। কেউ যাতে বিভ্রান্ত না হয়, সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, "কোনো উসকানিমূলক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া দেখানো যাবে না। আমাদের দায়িত্ব হলো ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি সামলানো এবং দেশের শান্তি বজায় রাখা।"
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা
সেনাপ্রধান বিশেষভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ওপর গুরুত্ব দেন এবং বলেন, "সামনে ঈদ। এই সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, তাহলে তা কঠোরভাবে দমন করা হবে।"
তিনি উল্লেখ করেন যে, সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংকট দক্ষতার সঙ্গে সামলেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও সম্প্রতি সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেছেন, বিশেষ করে ৫ আগস্টের পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সেনাবাহিনীর দায়িত্ব
সেনাপ্রধান জানান, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর গ্যারি পিটারস সেনাবাহিনীর কাজের প্রশংসা করেছেন। এছাড়া জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দক্ষতা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।
এদিকে, রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের বাংলাদেশ সফরকালে কক্সবাজারে এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করায় সেনাপ্রধান রামু সেনানিবাসকে ধন্যবাদ জানান।
আহত শিক্ষার্থীদের পাশে সেনাবাহিনী
সেনাপ্রধান আরও বলেন, সেনাবাহিনী সবসময় দেশের মানুষের পাশে আছে। সম্প্রতি ঢাকা সেনানিবাসের সেনা মালঞ্চে জুলাই অভ্যুত্থানে আহত শিক্ষার্থীদের সম্মানে এক ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যেখানে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
শেষ কথা
সেনাপ্রধানের বক্তব্য স্পষ্ট—গুজবে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশ ও জনগণের সুরক্ষায় সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনী সদা প্রস্তুত রয়েছে এবং যেকোনো সংকটে জাতির পাশে থাকবে