লেখক: বখতিয়ার শামীম।
যখন এই লেখাটি তৈরি করছি তখন গভীর রাত। ঘরের চারপাশে নীরবতা, কিন্তু অন্তরের ভেতরে এক অশান্ত ঝড়। জীবনের বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে, বহু স্বপ্ন ও হতাশার ভার কাঁধে নিয়ে কলম হাতে নিয়েছি। হাত কাঁপছিল, মনে হচ্ছিল—কি লিখব, কি বলব? দেশের যে গভীর সংকট, তাকে ভাষায় বেঁধে ফেলা কি আদৌ সম্ভব? এই দেশটা আজ এমন এক মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে যেখানে জনগণের জন্য আগামীকাল কেমন হবে, সেটাই স্পষ্ট নয়। একদল নির্বোধ জাতি, বিভ্রান্ত জনগণ, যারা বুঝতেই পারছে না পরশু কি আসছে, অথবা আদৌ কোনো "ভবিষ্যৎ" আছে কি না। এই বিভ্রান্তির পেছনে রয়েছে একটি সুপরিকল্পিত চক্রান্ত। দেশের ভেতরের এক শ্রেণির রাজনৈতিক দল, যারা নিজেদের মতাদর্শে নয়, বরং ক্ষুধা, জিদ, লোভ আর প্রতিহিংসায় অন্ধ হয়ে পড়েছে। তারা জানে না, তারা কী করছে, কিংবা আরও ভয়ানক—তারা জানেও, কিন্তু তবুও করছে। ষড়যন্ত্রের জাল তারা এতটাই সুচারুভাবে বিছিয়ে রেখেছে যে সাধারণ মানুষ অনেক সময় বুঝতেই পারে না কারা আসল দায়ী। রাজনৈতিক দলগুলোর এই জিদ, এই স্ট্যান বাজি, এই মারামারি, হরতাল, রক্তারক্তি কোনো শিক্ষিত জাতির অভ্যাস হতে পারে না। কিন্তু তারাই করছে, যাদের আমরা কখনো জনপ্রতিনিধি বলে ভোট দিয়েছিলাম।
এই রাজনীতিবিদরা বিগত ১৬ বছর ধরে এমন ক্ষুধার্ত হয়ে আছে যে, তাদের চোখে এখন কেবল নির্বাচন ছাড়া আর কিছু দেখছে না। তারা চায় ক্ষমতা, চায় পদ, চায় বাজেটের দায়িত্ব। দেশের পুনর্গঠন বা সংস্কার তাদের মাথায় নেই, মাথায় নেই তাদের দল গোছানোর ব্যাপার বলে কিছু আছে! ভাবতে অবাক লাগে, তারা বিগত ষোল বছরে একটা বালুর ট্রাক সরাতে পারেনি তাদের চেয়ারপারসনের বাড়ির সামনে থেকে। তাদের চেয়ারপারসনের (বেগম খালেদা জিয়ার) চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে পারেনি, তারা মাঠে ঠিকমতো আন্দোলন করতে পারেনি, দাঁড়াতে পারেনি, আর পারেনি বলেই বিগত ষোলটা বছর ধরে ঈদের পরে আন্দোলন করবে এবং আন্দোলন দেবে এমনকি মৌখিক ঘোষণার মাধ্যমে শুধু কথা দিয়ে গেছেন তার আর বাস্তবায়ন হয়নি। আজ এরাই বড় বড় কথা বলে কিন্তু জাতি কি ভুলে গেছে এরা রাজনীতিকে ব্যবসায় রূপান্তর করেছে—লাভজনক এক ব্যবসা, যেখানে বিনিয়োগ লাগে না, কিন্তু আয় হয় কোটি কোটি টাকার। এই আয় আসে সাধারণ মানুষের রক্ত, ঘাম, শ্রম ও করের টাকায়। এই রাজনীতি এখন শুধুই লুটপাটের হাতিয়ার।
১৬ বছরে এরা দেশটাকে নিঃশেষ করে দিয়েছে। এখন যখন সেই স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে, তখনই সুযোগ এসেছে নতুন করে গড়ে তোলার। কিন্তু এই সুযোগকেও এরা নষ্ট করতে উঠেপড়ে লেগেছে। হেনরি কিসিঞ্জার ৫৪ বছর আগে যে "তলাবিহীন ঝুড়ি" বলে অভিহিত করেছিলেন বাংলাদেশকে, আজ যেন সেই ভবিষ্যদ্বাণী মূর্ত হয়ে উঠেছে। আজ দেশটার তলা ফুটো—যা-ই দেওয়া হয়, তা গায়েব হয়ে যায় কোনো এক রাজনৈতিক পিশাচের পকেটে, আর সাধারণ মানুষ দারিদ্র্যের খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকে। এই ১৬ বছরে শেখ হাসিনা ও তার প্রশাসন ২৮ লক্ষ কোটি টাকা বিভিন্ন উপায়ে লুটপাট করেছে বলে যেসব তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে, তা কোনো কল্পকাহিনী নয়। এই টাকা আজ দেশের বাইরে, আর এই অর্থ ফিরিয়ে আনার সাহস বা সামর্থ্য একমাত্র যাঁর আছে, তিনি ড. মুহাম্মদ ইউনুস। আন্তর্জাতিক মহলে যার গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নাতীত, যার ভাবমূর্তি এতটাই শক্তিশালী যে, তিনি থাকলে এই টাকা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তু সেখানেই বাধা। এই লুটেরা শ্রেণি, দুর্নীতিপরায়ণ রাজনীতিবিদ, ভণ্ড কোম্পানির মালিক ও সামরিক-প্রশাসনিক গোষ্ঠী কোনোভাবেই চায় না যে ইউনুস সাহেব ক্ষমতায় থাকুন। কারণ তাঁর থাকাটা মানে তাদের শেষ। আর সে কারণেই তাঁকে সরাতে, ব্যর্থ করতে, জনমত বিপরীত করতে তারা মেতে উঠেছে এক নতুন ষড়যন্ত্রে। এখন তারা আবার হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে চাইছে—ফ্যাসিস্ট শাসনকে ফিরিয়ে আনতে চাইছে—যাতে তাদের লুটপাট আবার শুরু হয়।
এই মুহূর্তে আমাদের সামনে দুটি পথ: একটি ধ্বংসের, আর একটি পুনর্গঠনের। ইতিহাস যেন আমাদের হাতে কলম তুলে দিয়ে বলছে—এইবার ঠিকটা লেখো।
তিন দশক মিশরে একচ্ছত্র শাসন করেছেন হোসনি মোবারক। তাঁর পতন আরব বসন্তের ঢেউয়ে। এক ঐতিহাসিক জোয়ারে পুরো আরব বিশ্ব যখন গণতন্ত্রের সুরে আশার আলোকবর্তিকা খুঁজছিল, তখন মিশরের জনগণও প্রত্যাশা করেছিল এক নতুন সূর্যোদয়ের। মোবারকের পতনের পর নির্বাচিত হয়েছিলেন মোহাম্মদ মুরসি। কিন্তু গণতন্ত্র স্থায়ী হবার আগেই, তাতে ছিদ্র তৈরি হয়। একের পর এক আন্দোলন, দাবি, পথ অবরোধ, ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক বিভাজন—মুরসির সরকারকে দাঁড়াতেই দেওয়া হয়নি। এটা ছিল একটি গণতান্ত্রিক সম্ভাবনার অকালমৃত্যু। এই চিত্রপটের নেপথ্যে ছিল আন্তর্জাতিক স্বার্থ, ইসরায়েলি কৌশল, সৌদি আরবের প্রভাব এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কৌশলের ঘূর্ণাবর্ত। এসবের মধ্যে দিয়ে সেনাপ্রধান সিসি ক্ষমতা দখল করলেন। গণতন্ত্র আরব বসন্তের হাত ধরে এসে শেষ হলো স্বৈরতন্ত্রের তলানিতে। একই পরিণতি হলো লিবিয়া, সিরিয়া ও তিউনিসিয়ায়। কোথাও কোথাও তা গৃহযুদ্ধে পরিণত হয়েছে, কোথাও রাষ্ট্রই বিলুপ্তির পথে। আজ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও এক রকমের রাজনৈতিক পুনরাবৃত্তির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। শেখ হাসিনা সরকারের দীর্ঘকালীন শাসনের পরে, বিভিন্ন গুম, খুন, দখলদারিত্ব এবং বাকস্বাধীনতা সংকোচনের মধ্যে দিয়ে জাতি পৌঁছেছে এক উত্তাল মোড়ে। যেখানে মানুষ আশায় বুক বেঁধে অপেক্ষা করেছিল পরিবর্তনের। সেই পরিবর্তনের রূপে জাতি পেয়েছে ইউনুস সাহেবকে—একজন যিনি দীর্ঘদিন ধরে দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও আন্তর্জাতিক ইমেজের জন্য নিরবিচারে কাজ করেছেন, কিন্তু তাঁর শাসনের শুরু থেকেই শুরু হয়েছে একই ধাঁচের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা।
ছাত্র আন্দোলন, নাগরিক দাবি, রাজনৈতিক মতবিরোধ—সবকিছু যেন পূর্বনির্ধারিত ছকে সাজানো। সরকার গঠনের পরপরই যেভাবে তাঁর কর্মকাণ্ডে বাধা এসেছে, তা নিতান্তই গণতান্ত্রিক চর্চার অভাবে নয়; বরং এটা পরিকল্পিত একটি অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির প্রয়াস, যা ভিতর থেকে উৎসাহিত হচ্ছে একাধিক অংশীদারের মাধ্যমে। এখানে প্রশ্ন উঠবে—কে বা কারা এই আন্দোলনের পেছনে? এর একটি উত্তর হলো ভারতের ভূমিকা। ভারত বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঐতিহাসিকভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে। শেখ হাসিনার সরকার ভারতের জন্য ছিল একটি দীর্ঘমেয়াদি সুবিধাজনক অংশীদার। ইউনুস সাহেবের অভ্যুদয় সেই সুবিধায় আঘাত হেনেছে, যা থেকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং কূটনৈতিক মহল সরাসরি বিরক্ত। সেই বিরক্তি থেকেই উদ্ভব হয়েছে একাধিক বৈঠক, একাধিক লবিং এবং পুরাতন ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা। বিএনপি, যারা এই পরিবর্তনের পর রাজনৈতিকভাবে কিছুটা পরিসর পেয়েছিল, তারাও বুঝে উঠতে পারছে না যে ইউনুসের অনুপস্থিতিতে তাদের অস্তিত্ব কতটা বিপন্ন হতে পারত। সরাসরি ক্ষমতায় এলে তারা হতো ভারতীয় কৌশলের একটা 'বিফোর দ্য ফল' পুঁজি। কারণ, ভারতের কাছে বিএনপি কখনোই ছিল না নির্ভরযোগ্য। আর শেখ হাসিনার পুনরাবির্ভাবের যে পরিকল্পনা এখনো সক্রিয়, তাতে বিএনপি যতই আশাবাদী হোক, তাদের বাস্তবতাটা হবে আরো শোচনীয়। এখন বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তি, যারা বিগত ষোল বছর ধরে নিজে কিছু খেতে না পেরে প্রতিষ্ঠান দখল, সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজি, ভূমি দখল—সবকিছু করে এসেছে, তারা চায় না কোনো শক্তিশালী নেতৃত্ব হোক। এই দলগুলো উন্নয়নের বড় প্রকল্পে বাধা দিচ্ছে, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহ করছে, প্রশাসনের ন্যায়সংগত সংস্কার আটকাচ্ছে। একদিকে রাজনৈতিক দুর্বলতা, অন্যদিকে জনগণের বিভ্রান্তি এবং তৃতীয়দিকে আন্তর্জাতিক চাপ—সব মিলিয়ে একটি গর্তের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বাংলাদেশকে।
সাধারণ মানুষ এখনো বুঝতে অক্ষম যে ইউনুস সাহেব এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য একমাত্র বিকল্প। তিনি ক্ষমতায় না এলে, এই দেশকে ধ্বংস করা সহজ হতো। যারা এখন তাঁকে নিয়ে অসন্তুষ্ট, তাদের অধিকাংশই বুঝতে চায় না যে, তাঁর নেতৃত্ব ব্যতীত এদেশ বহু আগেই ভারতের করাল গ্রাসে চলে যেত, একটি বিভক্ত রাষ্ট্রে পরিণত হতো, যেখানে অভ্যন্তরীণ গৃহযুদ্ধ অনিবার্য হতো। আজ সেনাপ্রধান পর্যন্ত তৎপর হয়ে উঠেছেন—যেমনটি মিশরে ঘটেছিল। ক্ষমতার একটি ভ্যাকুয়াম তৈরি করে ফের সামরিক শাসনের মাধ্যমে রাষ্ট্রযন্ত্র হস্তগত করার ষড়যন্ত্র দৃশ্যমান। বিএনপি এই খেলায় ব্যবহৃত হচ্ছে একটি প্যাসিভ পার্টনার হিসেবে, যারা ভারতের দিকনির্দেশনায় মঞ্চে থাকলেও স্ক্রিপ্ট লিখছে অন্য কেউ। তাদের বোঝা উচিত, শেখ হাসিনার পুনরাবির্ভাব আরেকটি যুগের সূচনা হবে, যেখানে বিএনপির অস্তিত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে। বর্তমান বাস্তবতা এটাই—এই মুহূর্তে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করতে, আন্তর্জাতিকভাবে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এবং অন্তর্দ্বন্দ্ব পরিহার করতে একজন ইউনুস অপরিহার্য। ব্যক্তি ইউনুসের প্রতি পক্ষপাত নয়, বরং রাষ্ট্র পরিচালনায় দক্ষতা, সাহসিকতা এবং আন্তর্জাতিক সমীকরণ বোঝার একটি প্রয়োগগত বাস্তবতা। তাঁর সরকার যদি অস্থিরতায় পর্যবসিত হয়, তবে এই রাষ্ট্র আবার হারিয়ে যাবে এক অনিশ্চিত গন্তব্যে।
সার্বিকভাবে, মিশরের ইতিহাস আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে—গণতন্ত্র শুধু অধিকার নয়, এটা দায়িত্বও। আর সে দায়িত্বে ব্যর্থ হলেই রাষ্ট্র চলে যায় সেনাবাহিনী, আন্তর্জাতিক শক্তি বা অযোগ্য রাজনীতিবিদদের হাতে। বাংলাদেশ সেই ছায়াময় পথেই হাঁটছে কিনা, তা এখনই ভাবার সময়। আজ যদি ইউনুস সাহেব ব্যর্থ হন, তাহলে ব্যর্থ হবে একটি জাতির স্বপ্ন। ব্যর্থ হবে সেই ভবিষ্যৎ, যেখানে স্বাধীনতা শুধু একটি পুরাতন পোস্টারের নাম হয়ে যাবে। এমন নয় যে এই রাষ্ট্রের জনগণ রাজনৈতিকভাবে অপরিণত, বরং তাদের সামনে এমন এক বাস্তবতা দাঁড় করানো হয়েছে যেখানে সত্য-মিথ্যার ব্যবধান অস্পষ্ট, এবং যেখানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমের একাংশ বিভ্রান্তি ছড়ানোয় ব্যস্ত। ষড়যন্ত্রের এই জাল এত সূক্ষ্মভাবে বিছানো হয়েছে যে সাধারণ মানুষ যেমন চায় পরিবর্তন, তেমনই তারা আতঙ্কিত পরিণতির আশঙ্কায় পিছিয়ে যায়। রাজনীতির এই ঘূর্ণাবর্তে সবচেয়ে বড় যে ক্ষতিগ্রস্ত গোষ্ঠী তা হলো দেশের তরুণ প্রজন্ম। তারা যে স্বপ্ন নিয়ে পড়াশোনা করে, উদ্যোক্তা হতে চায়, গবেষণায় মন দেয়—সেই স্বপ্নের পায়ে শিকল পড়ে যায় রাজনৈতিক অস্থিরতা, নিয়মহীনতা ও নেতৃত্বহীনতার কারণে। ইউনুস সরকারের একটি বড় সাফল্য ছিল এই তরুণদের মাঝে আশাবাদের সঞ্চার করা, দেশের মধ্যে নতুন বিনিয়োগ ও স্টার্টআপ সংস্কৃতির ভিত গড়ে তোলা। কিন্তু এই অর্জনও এখন ধ্বংসের মুখে।
অন্যদিকে, বিচার ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা, প্রশাসনের জবাবদিহিতা, এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে যেসব সংস্কার উদ্যোগ ইউনুস সাহেবের অধীনে শুরু হয়েছিল, তা এখন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে কেবলমাত্র রাজনৈতিক চাপ ও ষড়যন্ত্রের কারণে। অনেক সময় জনগণ বুঝতেও পারে না যে কে কাকে বাধা দিচ্ছে, কে কীভাবে একটি সরকারকে ব্যর্থ করতে কাজ করছে। জাতির জন্য এখন প্রয়োজন, সেই নীরব, পরিপক্ব জনগণের একটি অংশ যারা দলীয় রাজনীতির বাইরে থেকেও বুঝতে পারে কোন দিকটায় জাতির কল্যাণ আছে। এই অংশের কণ্ঠস্বর যতটা জোরালো হবে, ততটা সম্ভব হবে একটি স্থিতিশীল, দায়িত্বশীল এবং ভিশনারি নেতৃত্বকে টিকিয়ে রাখা।মিশরের উদাহরণ শুধু ইতিহাস নয়, একটি সতর্কবার্তা। আরব বসন্তের নামে যে বিপ্লব শুরু হয়েছিল, তা পরিণত হয়েছে অন্ধকার রাজনৈতিক শূন্যতায়। বাংলাদেশ কি সেই একই কাহিনির অংশ হতে যাচ্ছে? যেখানে একটি সম্ভাব্য সফল নেতৃত্ব শুধু অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র আর আন্তর্জাতিক চক্রান্তে হারিয়ে যাবে? যেখানে জনগণের ভরসা বারবার বিপন্ন হবে? যদি তা-ই হয়, তবে আমাদের ভবিষ্যৎও মিশরের মতোই লেখা থাকবে স্বৈরতন্ত্র, ভয়, দখলদারিত্ব আর একটি অনির্বচনীয় অনিশ্চয়তার পাতায়।
আজ, যখন সময় এখনো আছে, নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রাখা, গঠনমূলক সমালোচনা করা, এবং জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। কারণ, একবার যদি গণতন্ত্রের ভিত্তি আবারও ভেঙে পড়ে, তাহলে তা শুধুমাত্র একটি সরকার পতনের গল্প হবে না—তা হবে একটি রাষ্ট্রের মৌলিক চেতনাকে বিলুপ্ত করার ইতিহাস।
লেখক পরিচিতি:—
বখতিয়ার শামীম
একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লেখালেখি করেন।