বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠী যখন আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধকরণের দাবিতে রাজপথে, তখন নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে দলটির নেতাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত ‘ডেভিল হান্ট’ অভিযানে। এই অভিযানকে কেন্দ্র করে সাবেক সংসদ সদস্য এবং রাজনীতিবিদ নিলোফার চৌধুরী মনি দিয়েছেন এক বিস্ফোরক মন্তব্য।
তিনি বলেন, “এই দেশে এখন শুধু সার্কাস চলছে। আসল নাটকের পরিচালকরা পর্দার আড়ালে থেকে যাচ্ছে। যারা ক্ষমতার কেন্দ্রে ছিল, যারা নীতি নির্ধারণ করেছে, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে নিজেদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করেছে—তাদের কাউকে ধরা হচ্ছে না। গ্রেপ্তার হচ্ছে শুধু আওয়ামী লীগের নাতি-পুতি, যারা বড়জোর নামকাওয়াস্তে পদে ছিল।”
নিলোফার মনি আরও বলেন, “ডেভিল হান্টের নামে যাদের ধরা হচ্ছে, তাদের কারও আসল রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা ছিল না। এই নাটকীয় অভিযান মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চালানো হচ্ছে। আসল অপরাধীরা আজও নিরাপদে, কারণ তাদের গ্রেপ্তার করলে ক্ষমতার অনেক গোপন দিক উন্মোচিত হয়ে পড়বে।”
তিনি মনে করেন, এই ধরণের নিষেধাজ্ঞা এবং প্রতীকী গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে বরং আওয়ামী লীগকে ‘নতুনভাবে বৈধতা’ দেওয়া হচ্ছে। তার ভাষায়, “আওয়ামী লীগ অতীতে দুইবার নিষিদ্ধ হয়েছিল, কিন্তু প্রতিবারই ফিরে এসেছে। নিষিদ্ধ হওয়ার পর তাদের প্রতি সহানুভূতি তৈরি হয়, এবং তারাই পরবর্তীতে পুনর্বাসিত হয়ে আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসে।”
নিলোফার মনি এক উদাহরণ টেনে বলেন, “যখন আওয়ামী লীগ জামায়াতকে নিষিদ্ধ করল, তখনই কিন্তু জামায়াতের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা তৈরি হলো। তারা আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে ‘রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার’ হিসেবে নিজেদের তুলে ধরতে পারল। এখন যদি আওয়ামী লীগকে একইভাবে নিষিদ্ধ করা হয়, তাহলে তারাও আন্তর্জাতিক মহলে একই যুক্তি তুলে ধরবে। এতে বরং আওয়ামী লীগ নতুন করে রাজনৈতিক মঞ্চে ফিরে আসার সুযোগ পাবে।”
তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগ তো নিজেই রাষ্ট্রের বাইরে দাঁড়িয়ে গেছে। আপনি যাকে নিজেই অবাঞ্ছিত করেছেন, তাকে আর নিষিদ্ধ করবেন কীভাবে? এই নিষেধাজ্ঞার নাটক আসলে এক ধরনের প্রহসন। এবং এই প্রহসনের মধ্য দিয়ে জনসাধারণের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে রাখা হচ্ছে।”
নিলোফার মনি বলেন, “আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল এখনো বিচার শেষ করেনি, অথচ বলা হচ্ছে, সেই বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত। প্রশ্ন হলো, বিচার শেষ হতে কত বছর লাগবে? এবং ততদিন পর্যন্ত তারা কি কোনোভাবে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করবে না? এসব প্রশ্নের উত্তর কেউ দিচ্ছে না।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মনির বক্তব্যটি এককভাবে রাজনৈতিক ক্ষোভপ্রসূত হলেও, বাস্তবতার ছাপও এতে রয়েছে। ইতিহাস বলছে, বাংলাদেশে নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলগুলো কখনোই চিরতরে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়নি। তারা এক সময় নতুন ছদ্মবেশে, নতুন ব্যানারে আবার ফিরে এসেছে।
একজন পর্যবেক্ষক বলেন, “যদি দলটির বিরুদ্ধে সত্যিকার অর্থে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তবে তা জনগণের সামনে স্বচ্ছভাবে তুলে ধরতে হবে। নাহলে সাধারণ মানুষ এটিকে রাজনৈতিক নাটক বলেই ধরে নেবে।”
এমন অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে—আসলে এই ‘ডেভিল হান্ট’ অভিযানের লক্ষ্য কি? ক্ষমতা হারানো একটি দলকে বিচারের মুখোমুখি করা, নাকি তাদের সহানুভূতি অর্জনের সুযোগ তৈরি করা?
নিলোফার মনি যে সরাসরি বলেছেন, “এই নিষেধাজ্ঞা আসলে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের রাস্তাই তৈরি করে দিচ্ছে”—তা নিঃসন্দেহে নতুন করে রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
এই প্রতিবেদনটি রাজনৈতিক অঙ্গনের সাম্প্রতিক সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ে আলোকপাত করেছে। এর গুরুত্ব বিবেচনায় নিলে, সাধারণ মানুষসহ সংশ্লিষ্ট মহলে আরও গভীর পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে।



















