বাংলাদেশ ক্রিকেটে চলছে কঠিন সময়। পরপর সিরিজ হার, বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে বারবার ব্যর্থতা, এবং সর্বশেষ পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ—সব মিলিয়ে হতাশা চরমে। এমন এক বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) দায়িত্ব নিয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল।
দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম দিকেই তিনি বুঝিয়ে দিলেন, বাস্তবতাকে অস্বীকার করে লাভ নেই। দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “এখন আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এই মুহূর্তে সমালোচনার চেয়ে খেলোয়াড়দের উজ্জীবিত করা জরুরি।
পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হারের আগেও বাংলাদেশ হেরেছে আরব আমিরাত ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলের কাছে। এই পরাজয়গুলো শুধু সংখ্যার খাতায় যুক্ত হয়নি, বরং প্রশ্ন তুলে দিয়েছে দলের প্রস্তুতি, মনোভাব এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে।
বুলবুল বলেন, “আমরা সবশেষ সিরিজে দেখেছি, কীভাবে প্রতিপক্ষ দলগুলো আমাদের দুর্বলতার ফায়দা তুলেছে। একেকটা ম্যাচে একেক ধরণের ভুল করা হয়েছে। এখন আর আত্মবিশ্বাস ভেঙে ফেলা যাবে না, বরং দলকে মনোবলে ফিরিয়ে আনতে হবে।”
নতুন বিসিবি সভাপতি জানিয়েছেন, পাকিস্তান সফর শেষে জাতীয় দল দেশে ফিরলে তাদের পারফরম্যান্স মূল্যায়নের কাজ শুরু হবে। খেলোয়াড়দের ফিডব্যাক জানানো হবে, উন্নতির সুযোগ কোথায় তা বিশ্লেষণ করা হবে।
“আমরা চাই, তিনটি ফরম্যাটেই উন্নতির চেষ্টা করতে। টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে কিংবা টেস্ট—প্রতিটি জায়গায় আমাদের ঘাটতি আছে। এখন সেটা চিহ্নিত করে কাজ শুরু করতে হবে,” বলেন আমিনুল।
তিনি বলেন, “একটি দলের পারফরম্যান্স সবসময় একরকম থাকে না। কখনও ভালো হবে, কখনও খারাপ। কিন্তু খারাপ সময় এলেই সেটা কেন ঘটছে, তা বিশ্লেষণ করতে হবে। এই বিশ্লেষণ ছাড়া উন্নতি সম্ভব না।
আগামী বছর ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিত হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেই টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে বিসিবি এখন থেকেই পরিকল্পনায় যাচ্ছে। তবে বুলবুল বিশ্বাস করেন, দলের বর্তমান অবস্থায় বড় কিছু আশা করার আগে তাদের ভিত গুছিয়ে নিতে হবে।
“আমাদের লক্ষ্য অন্তত দ্বিতীয় রাউন্ড পর্যন্ত যাওয়া। তবে সেটা তখনই সম্ভব, যখন আমরা দল গোছাতে পারব। আপনি দেখেছেন, আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র এমনকি পাকিস্তানের সঙ্গেও আমরা হেরেছি। এই অবস্থায় কিছু না করে বসে থাকলে হবে না। এখন সময় ঘুরে দাঁড়ানোর।”
বিসিবি সভাপতি মনে করেন, এই মুহূর্তে অকারণ সমালোচনা করে দলের পরিবেশ আরও নষ্ট করার কোনো মানে নেই। বরং প্রয়োজন খেলোয়াড়দের পাশে দাঁড়ানো, ভুল থেকে শিখতে উৎসাহ দেওয়া এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করা।
তিনি বলেন, “আমরা চাই এই দল আবার ঘুরে দাঁড়াক। অতীতেও দল খারাপ সময় পার করেছে, কিন্তু ফিরে এসেছে। এবারও আমাদের লক্ষ্য একই—তবে তাত্ক্ষণিক সাফল্যের চেয়ে দীর্ঘমেয়াদি উন্নতির পথেই এগোতে চাই।
বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন বড় এক রূপান্তরের মুখে। পুরনো ভুলের পুনরাবৃত্তি রোধ করে নতুন নেতৃত্ব, পরিকল্পনা ও উদ্যমে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ই এখন সবচেয়ে জরুরি। সময়ের দাবি হলো—বলার চেয়ে করার দিকে মনোযোগ দেওয়া। আর সেই পথে প্রথম বার্তাটি দিলেন বিসিবির নতুন সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল।