জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও এর আওতাধীন কর ও শুল্ক কার্যালয়গুলোতে আজ রবিবার দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে পূর্ণদৈর্ঘ্য শাটডাউন। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন হাজারো কর্মকর্তা ও কর্মচারী। দাবি—এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে, নতুবা রাজস্ব আদায় কার্যক্রমে কেউ ফিরবেন না।
শনিবারের মতোই আজ সকাল থেকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআরের প্রধান কার্যালয় ‘রাজস্ব ভবন’-এর সামনে আন্দোলনকারীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। যদিও সকাল ১০টার দিকে আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কম ভিড় ছিল, তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংখ্যা বাড়তে শুরু করে।
প্রশাসনিক দিক দিয়ে রাজস্ব ভবনের নিরাপত্তা কিছুটা শিথিল দেখা গেছে। প্রধান ফটকে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করলেও, পরিচয়পত্র দেখিয়ে কর্মকর্তাদের প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়। তবে কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, প্রশাসনের চাপে কর্মীদের ভয়ভীতির মধ্যে রাখা হচ্ছে। উপস্থিত এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “সকাল ১০টা পর্যন্ত এনবিআরের নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভবনে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।”
শনিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে “মার্চ টু এনবিআর” কর্মসূচির আওতায় চট্টগ্রাম বন্দর, বেনাপোল বন্দর, ঢাকা কাস্টম হাউসসহ গুরুত্বপূর্ণ শুল্ক স্টেশনগুলো কার্যত অচল হয়ে পড়ে। কাস্টমস ও ভ্যাট আদায় থমকে দাঁড়ায়। একই চিত্র দেখা গেছে আজও। ফলে দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
একজন এনবিআর কর্মকর্তা বলেন, “কর্মসূচি আপাতত শান্তিপূর্ণ, তবে চাপ প্রয়োগের চেষ্টা হলে কঠোর রূপ নিতে পারে।” আন্দোলনকারীদের দাবি, এনবিআরের সংস্কারে তাদের প্রস্তাব ও মতামত উপেক্ষা করে একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান। তাদের মতে, এর ফলে প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও ভবিষ্যৎ উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা আলোচনায় আগ্রহী, তবে তা একটাই শর্তে—বর্তমান চেয়ারম্যানকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে। তাঁরা অভিযোগ করেন, এনবিআরের নেতৃত্বের প্রতি দিন দিন আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতামতকে অগ্রাহ্য করা, দমন-পীড়নের চেষ্টা, বদলি ও হুমকির মতো অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে।
সংগঠনটির একজন নেতা বলেন, “আমরা প্রশাসন বা সরকারের সঙ্গে সংঘাতে যেতে চাই না। কিন্তু আমাদের মতামত, আমাদের পেশাগত মর্যাদা, এবং এনবিআর সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা যদি অগ্রাহ্য করা হয়, তাহলে আন্দোলনের মাত্রা আরও বাড়ানো হবে।”
দেশের রাজস্ব আদায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান এনবিআরের টানা শাটডাউনের কারণে শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর খাতে লক্ষ কোটি টাকার আদায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে সরকারও আর্থিক চাপে পড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। বিভিন্ন পণ্য আমদানি-রপ্তানির প্রক্রিয়াও থমকে গেছে, যা দেশীয় বাজারে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি দ্রুত সমাধান না আসে, তাহলে শুধু রাজস্ব নয়, ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি এবং সরকারি সেবাও চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হবে।
এনবিআরে দ্বিতীয় দিনের মতো চলমান শাটডাউন কর্মসূচি শুধু একটি প্রশাসনিক সমস্যাই নয়, বরং দেশের রাজস্ব ব্যবস্থায় এক গভীর সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন—চেয়ারম্যান না সরানো পর্যন্ত তারা কাজে ফিরবেন না। ফলে এই অচলাবস্থা কতদিন চলবে, তা এখন সরকারের কৌশলগত পদক্ষেপের ওপরই নির্ভর করছে।



















