দাবির প্রতি মনোভাব ও সাধারণ মানুষের যন্ত্রণা: সড়ক–রেল অবরোধের নৈতিকতা

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা শহরের সাধারণ মানুষ ছিল এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সম্মুখীন। একদিকে কর্মব্যস্ত মানুষ ঘর ফেরার পথে, অন্যদিকে রাস্তার ওপর চলছিল একটি বড়
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা শহরের সাধারণ মানুষ ছিল এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সম্মুখীন। একদিকে কর্মব্যস্ত মানুষ ঘর ফেরার পথে, অন্যদিকে রাস্তার ওপর চলছিল একটি বড় আন্দোলন। দাবি ছিল একটি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা, তবে তার সঙ্গে সড়ক ও রেলপথ অবরোধের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এই আন্দোলনের ফলে ঢাকার ভেতর তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছিল, যা হাজার হাজার মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তবে প্রশ্ন উঠেছে, এটি কি একটি ন্যায়সংগত দাবি? এমনকি জনগণের যাত্রা ও যাপিত জীবনকে এভাবে বিঘ্নিত করা কি সঠিক? ঢাকায় এই অবরোধের ফলে সাধারণ মানুষ নির্ধারিত সময়ের পাঁচ ঘণ্টা পর বাড়ি ফিরতে সক্ষম হয়েছিল। যানবাহনে চড়তে না পেরে বহু মানুষ হেঁটে বাড়ি ফিরেছেন। রিকশা ও ট্যাক্সি চালকদের আয়ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আর এই অবস্থায় অসুস্থ রোগীদের অ্যাম্বুলেন্সও সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেনি কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমন পরিস্থিতির পর প্রশ্ন ওঠে, দাবির ক্ষেত্রে আমরা কতটুকু নৈতিকভাবে সঠিক? সাধারণ মানুষের যাত্রা ও জীবনযাত্রাকে বিঘ্নিত করা কি আমাদের দাবি আদায়ের সঠিক পথ? বিশেষ করে যখন আমরা জানি যে, সরকারের বড় কর্মকর্তাদের কাছে এসব প্রতিবাদ কখনই পৌঁছাবে না। এই আন্দোলনের একটি সমালোচনামূলক দিক হলো, আন্দোলনকারীরা যে গণমানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা না করেই নিজেদের দাবির জন্য এই পন্থা গ্রহণ করেছেন, তা একধরনের স্বার্থপরতা মনে হতে পারে। যদি তারা জানতেন না যে, সাধারণ মানুষ বিপর্যস্ত হবে, তা হলে সেটা অবিবেচনাপ্রসূত হতে পারে। তবে, আমাদের কি অন্য উপায় ছিল না? স্মারকলিপি প্রদান, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কি দাবির সঠিক সমাধান সম্ভব ছিল না? এসব পন্থায় জনগণের ক্ষতি না করে নিজের দাবির প্রতি সঠিক গুরুত্ব দেওয়া যেত। এছাড়া বাংলাদেশে এখন এমন একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে, যেখানে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই শুধু দাবির দৌড় চলছে। কেউ ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য দাবি তুলছে, কেউ আবার সরকারের বিরুদ্ধে কর্মসূচি গ্রহণ করছে। এমন একটি দাবির সংস্কৃতির মধ্যে যখন শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পরিবর্তে সহিংসতা ও জনভোগান্তি প্রবণতা হয়ে দাঁড়ায়, তখন এটি সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে, দাবির সঙ্গে দায়িত্বও থাকা উচিত। যদি আমরা দাবি তুলি, তবে সেই দাবির সঙ্গে সম্পর্কিত দায়িত্বগুলোর প্রতি নজর দেওয়া উচিত। দাবির সমর্থনে প্রতিবাদ করা একসময় সহিংস হয়ে ওঠে, যার ফলে সাধারণ মানুষের জন্য তা হয়ে দাঁড়ায় অবিশ্বাস্যভাবে কষ্টকর। সবশেষে, এটি মনে রাখা জরুরি যে, কোনও দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে আমরা যেন জনগণের দুর্গতির কারণ না হই, এবং দাবি তোলার পন্থাগুলো যেন সর্বদা শান্তিপূর্ণ থাকে। রাষ্ট্রের অবস্থাও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তাদের কাছে সমস্ত দাবি পূরণের উপকরণ থাকতে পারে না।
Ingen kommentarer fundet