ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুত্থান..

Abdullah Al Mamun avatar   
Abdullah Al Mamun
ড. ইউনুস চা বিক্রেতা নন; তিনি একজন উচ্চশিক্ষিত, প্রজ্ঞাবান ও দূরদর্শী নেতা।

লেখক: আব্দুল্লাহ আল মামুন

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সাম্প্রতিক সময়ে যে স্থিতিশীলতা ও ইতিবাচক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে, তার পেছনে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্ব ও কার্যক্রম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নোবেল বিজয়ী এই অর্থনীতিবিদের প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতায় দেশের অর্থনৈতিক খাতে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। এই প্রবন্ধে, আমরা তার সাম্প্রতিক কার্যক্রম, সাফল্য এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তার অবদানের বিস্তারিত পর্যালোচনা করব।

দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা

গত ছয় মাসে, ড. ইউনুসের নেতৃত্বে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে। বিশেষ করে, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, টমেটো এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ:

  • পেঁয়াজের দাম: পূর্বে ২০০ টাকা কেজি থেকে বর্তমানে ৪০ টাকা কেজিতে নেমে এসেছে।
  • কাঁচা মরিচের দাম: ৪০০ টাকা কেজি থেকে কমে ৫০ টাকা কেজি হয়েছে।
  • তরকারির দাম: ১০০ টাকা থেকে ৪০-৫০ টাকায় স্থিতিশীল হয়েছে।

এই মূল্য হ্রাস সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রায় স্বস্তি এনে দিয়েছে এবং তাদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে।

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে পূর্বে যে লুটপাট ও অব্যবস্থাপনা দেখা গিয়েছিল, তা রোধে ড. ইউনুস কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। লুট হওয়া ব্যাংকগুলো বন্ধ না করে, সেগুলোকে পুনর্গঠন ও পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে স্থিতিশীল করা হয়েছে। তার এই কৌশল ব্যাংকিং খাতে আস্থা ফিরিয়ে এনেছে এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিশ্বাস সৃষ্টি করেছে।

ড. ইউনুস কৃষি খাতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। বোরো মৌসুমে কৃষকদের জন্য সার, বীজ ও অন্যান্য উপকরণের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করেছেন, যা উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তায় সহায়তা করেছে। এছাড়াও, কৃষি ঋণের সুদহার কমিয়ে কৃষকদের আর্থিক বোঝা হ্রাস করা হয়েছে।

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ড. ইউনুস ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বী করার যে মডেল তৈরি করেছিলেন, তা আরও সম্প্রসারিত হয়েছে। নতুন নীতিমালার মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা হচ্ছে, যা উদ্যোক্তা সংস্কৃতি বিকাশে সহায়তা করছে।

ড. ইউনুসের প্রবর্তিত 'সোশ্যাল বিজনেস' মডেল এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। বাংলাদেশে এই মডেলের সফল বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে, যেখানে ব্যবসার মূল লক্ষ্য মুনাফা নয়, বরং সামাজিক সমস্যার সমাধান। এই মডেলের মাধ্যমে বেকারত্ব হ্রাস, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার উন্নতি সাধিত হচ্ছে।

ড. ইউনুসের 'থ্রি জিরো থিওরি'—জিরো পভার্টি, জিরো আনএমপ্লয়মেন্ট, জিরো নেট কার্বন এমিশন—আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই তত্ত্বের জন্য তিনি পুনরায় নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হতে পারেন, যা বাংলাদেশের জন্য গৌরবের বিষয়।

ড. ইউনুস চা বিক্রেতা নন; তিনি একজন উচ্চশিক্ষিত, প্রজ্ঞাবান ও দূরদর্শী নেতা। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতিতে যে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে, তা প্রশংসার দাবিদার। তার সৎ ও নিষ্ঠাবান নেতৃত্ব আমাদের জন্য অনুকরণীয়।

ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি এসেছে, তা আমাদের সকলের জন্য গর্বের বিষয়। তার কার্যক্রম ও সাফল্য আমাদেরকে ভবিষ্যতের জন্য আশাবাদী করে তোলে। আমরা আশা করি, তার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ আরও উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে।

*( তথ্যসূত্র: বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও প্রকাশিত প্রতিবেদন।)*

Keine Kommentare gefunden