পটিয়ায় সেনাবাহিনীর বাধা, পুলিশ প্রস্তুত: উত্তেজনার আগুন ছড়িয়ে পড়ছে আন্দোলনে
চট্টগ্রামের পটিয়ায় আজ বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ বাড়াতে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আন্দোলনের মূল কেন্দ্রস্থল পটিয়া মহাসড়কে যখন শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে তাদের একদফা দাবির পক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছিল, তখনই ঘটনাস্থলে হাজির হয় সেনাবাহিনীর একটি দল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সেনাবাহিনীর সদস্যরা প্রথমে শিক্ষার্থীদের সরে যেতে ‘আবশ্যক নির্দেশনা’ দেয়। কিন্তু পরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে হুমকি দিয়ে বলা হয়—“মহাসড়ক ছাড় না দিলে লাঠিচার্জ করা হবে।” এর কিছুক্ষণের মধ্যেই নারী শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকজনের ওপর শারীরিকভাবে বলপ্রয়োগের ঘটনা ঘটে। অনেকেই আহত হন, অনেকে দৌড়ে পালিয়ে যান। আহতদের স্থানীয় কয়েকটি ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে দেখা যায়।
এ ঘটনার সময় পেছনেই অবস্থান নেয় পুলিশের একাধিক ইউনিট। তারা ছিল টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও অন্যান্য দমনমূলক সরঞ্জামসহ প্রস্তুত। আন্দোলনকারীদের ভাষ্য, এ এক সরাসরি হুমকি—প্রতিবাদ করলেই দমন।
আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা সংবাদমাধ্যমকে জানায়, আজকের মধ্যে যদি সেনা বা পুলিশ বাহিনী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়, তবে তার প্রতিক্রিয়া শুধু পটিয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। ঢাকা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তাৎক্ষণিক অবরোধ ও আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।
তারা আরও বলেন, “আমরা বারবার শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছি। কিন্তু রাষ্ট্রীয় বাহিনী আমাদের দমন করতে উঠে পড়ে লেগেছে। আমরা হুমকি দিচ্ছি না, সতর্ক করছি—আজ যদি রক্ত ঝরে, কাল ঢাকার রাজপথে আগুন জ্বলবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দীর্ঘদিন ধরে জমতে থাকা জনঅসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ। তাদের বিরুদ্ধে সেনা ও পুলিশের এই প্রতিক্রিয়া শুধু একটি স্থানিক ঘটনা নয়, বরং তা দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। এর ফলে সরকারকে চাপের মুখে পড়তে হতে পারে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আজকের ঘটনার ভিডিও, ছবি, লাইভ স্ট্রিম ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের কান্না, রক্তাক্ত মুখ, আর সেনা-পুলিশের দমননীতি।
সরকারি সূত্রে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশ সদর দপ্তরের একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, "পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতেই বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। যদি কেউ আইন নিজের হাতে তোলে, তাহলে ব্যবস্থা নিতে হবে।
অন্যদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আছে বলে জানা গেছে।
এখন প্রশ্ন উঠছে—রাষ্ট্র কি আলোচনার পথে হাঁটবে, নাকি শক্তির মাধ্যমে এ আন্দোলন দমন করবে? কারণ ইতিহাস বলে, শিক্ষার্থীদের রক্ত যদি রাজপথে পড়ে, তাহলে আন্দোলন থেমে থাকে না—বরং বেগ পায়।
আজ পটিয়া, কাল ঢাকার শাহবাগ, নিউমার্কেট, গুলিস্তান—কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারছে না আন্দোলনের পরবর্তী গন্তব্য কোথায়।