চট্টগ্রাম নগরীর এক ব্যস্ততম এলাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ঘটেছে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। আজ রোববার ভোর চারটার দিকে হঠাৎ করেই আগুনের সূত্রপাত ঘটে হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায়। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়লেও ফায়ার সার্ভিসের সময়োচিত ও দক্ষ ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে। এই অগ্নিকাণ্ড শহরজুড়ে উদ্বেগের সৃষ্টি করলেও রোগীরা সম্পূর্ণ নিরাপদে ছিলেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে জানান, আগুনের উৎপত্তি ঘটে একটি বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে, যা হাসপাতালের আইপিএস ইউনিটে হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে মাত্র ২৫ মিনিটের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে সম্পূর্ণভাবে আগুন নিভাতে সময় লাগে প্রায় ২ ঘণ্টা ৫ মিনিট।
ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতায় হাসপাতালের মূল অংশ ও ওয়ার্ডগুলো আগুনের প্রকোপ থেকে রক্ষা পায়। ফলে রোগীদের সরিয়ে নিতে হয়নি বা কোনো আতঙ্ক ছড়ায়নি বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। মূল ক্ষতি হয়েছে হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায়, যেখানে অফিস সামগ্রী ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়ে গেছে। তবে আগুন হাসপাতালের ওষুধ বা চিকিৎসা সরঞ্জামের কোনো ক্ষতি করতে পারেনি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতালের স্টাফরা জানান, আগুন লাগার পরপরই ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্রুত ফায়ার সার্ভিসে যোগাযোগ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে কর্মীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে নির্দেশ দেয়। ফায়ার সার্ভিসের সময়োচিত উপস্থিতি ও দক্ষ নিয়ন্ত্রণে আগুন বড় ধরনের বিপর্যয়ে রূপ নেয়নি।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে আধুনিক সরঞ্জাম ও অভিজ্ঞ ফায়ার ফাইটারদের ব্যবহার করা হয়। তারা ভবনের ভেতরে ঢুকে আগুনের মূল উৎস খুঁজে বের করে এবং খুব সূক্ষ্মভাবে পানির ব্যবহার করে আগুনকে ঠেকিয়ে দেয়।
ঘটনার পরপরই তদন্ত শুরু করেছে চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস এবং বিদ্যুৎ বিভাগ। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, আইপিএস সিস্টেমে থাকা একটি পুরাতন তারে শর্টসার্কিটের মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা ভবিষ্যতে আরও উন্নত বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
অগ্নিকাণ্ডের সময় হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোর সার্ভিস চালু ছিল। তবে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দিয়ে জরুরি পাওয়ার ব্যাকআপ চালু করা হয়। কর্তৃপক্ষ জানায়, রোগীদের সরিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন হয়নি, কারণ আগুনের মূল কেন্দ্র হাসপাতালের সেবা বিভাগ থেকে অনেকটাই দূরে ছিল।
এর মাত্র দুদিন আগে, গত শুক্রবার চট্টগ্রামের লালখান বাজারের মমতা নগর মাতৃসদন ক্লিনিকেও এমন একটি আতঙ্কজনক ঘটনা ঘটে। তবে সেটি আগুন নয়, বরং অক্সিজেন সিলিন্ডার লিকেজ ছিল বলে জানায় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। যদিও সাধারণ মানুষের মধ্যে এতে কিছুটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
চট্টগ্রামের ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ড একটি বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারত। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের দক্ষতা ও দ্রুত পদক্ষেপে তা রক্ষা পেয়েছে। তবে বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে এবং সব হাসপাতালেই এখন সময় এসেছে প্রযুক্তিগত ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক হওয়ার।
শহরের গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখনই প্রয়োজন কঠোর তদারকি ও ঝুঁকিমুক্ত বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। অন্যথায় ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা আরও ভয়াবহ হতে পারে।