close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

চলতি বছরে ১০০০ ফিলিস্তিনিকে বিনা খরচে হজ পালনের সুযোগ দিচ্ছে সৌদি বাদশাহ..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইসরায়েলি আগ্রাসনে ক্ষতিগ্রস্ত গাজার মানুষদের পাশে দাঁড়ালেন সৌদি বাদশাহ সালমান। চলতি হজ মৌসুমে এক হাজার ফিলিস্তিনিকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে হজ পালনের সুযোগ দিচ্ছেন তিনি। পুরো ব্যয় বহন করবে সৌদি সরকার।..

গাজার রক্তাক্ত বাস্তবতায় সৌদি বাদশাহর অনন্য দৃষ্টান্ত: এক হাজার ফিলিস্তিনিকে বিনা খরচে হজের আমন্ত্রণ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের সবচেয়ে পবিত্র আচার হজ যখন সন্নিকটে, ঠিক সেই মুহূর্তে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনে ক্ষতিগ্রস্ত ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানোর অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। চলতি বছরের হজ মৌসুমে তিনি এক হাজার ফিলিস্তিনি নাগরিককে সম্পূর্ণ বিনা খরচে হজ পালনের সুযোগ করে দিয়েছেন।

এই সিদ্ধান্তের ফলে যারা গাজায় ইসরায়েলি হামলায় স্বজন হারিয়েছেন কিংবা আহত হয়েছেন, তাদের জন্য এবার হজে যাওয়ার দ্বার খুলে গেল। বাদশাহ সালমানের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ফিলিস্তিনি জনগণের দুঃখ-দুর্দশার প্রতি সৌদি নেতৃত্বের সহানুভূতির শক্ত প্রতিফলন।

সৌদি প্রেস এজেন্সির বরাতে জানা গেছে, সোমবার (১৯ মে) এই নির্দেশ জারি করেন বাদশাহ সালমান। এই হজযাত্রার ব্যয়ভার পুরোপুরি বহন করবেন তিনি নিজেই। শুধু তাই নয়, হজের পূর্ব প্রস্তুতি থেকে শুরু করে ভ্রমণ, থাকা-খাওয়া, চিকিৎসা এবং হজের আনুষ্ঠানিকতা পালনের পুরো প্রক্রিয়াটি পরিচালিত হবে সৌদি সরকারের তত্ত্বাবধানে।

‘দ্য কাস্টোডিয়ান অব দ্য টু হলি মস্কস’ গেস্টস প্রোগ্রাম

এই মহৎ উদ্যোগটি সৌদি আরবের ‘দ্য কাস্টোডিয়ান অব দ্য টু হলি মস্কস’ গেস্টস প্রোগ্রামের অংশ। এটি পরিচালনা করছে ইসলামী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দাওয়া অ্যান্ড গাইডেন্স বিভাগ। মূলত এই প্রোগ্রামের আওতায় প্রতিবছর বিভিন্ন দেশের নির্যাতিত, নিপীড়িত বা বিশেষ অবদানের জন্য বাছাইকৃত মুসলিমদের হজে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।

এবারের তালিকায় গাজার নির্যাতিত মানুষদের অন্তর্ভুক্ত করায় মুসলিম বিশ্বে ইতোমধ্যে প্রশংসার জোয়ার বইতে শুরু করেছে। অনেকেই মনে করছেন, সৌদি নেতৃত্ব মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সহানুভূতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

বিশেষ পরিকল্পনা এবং দ্রুত বাস্তবায়ন

ইসলামী বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, ফিলিস্তিনি হজযাত্রীদের নিরাপদ ও সম্মানজনক হজ পালন নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে একটি বিস্তৃত পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। ভিসা ইস্যু, ফ্লাইট, হোটেল বুকিং, স্বাস্থ্য সেবা এবং হজের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার জন্য একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।

মানবিক সংকটে বিশ্বনেতৃত্বের ভূমিকা

গাজা বর্তমানে ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ মানবিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালগুলো বোমায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, শিশু ও নারীসহ হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এমন বাস্তবতায় সৌদি বাদশাহর এই সিদ্ধান্ত শুধু হজ পালনের সুযোগ নয়, এটি এক ধরনের আশার আলো এবং সহানুভূতির বার্তা বহন করে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের জটিল রাজনৈতিক বাস্তবতায় সৌদি আরবের এই ভূমিকা একদিকে যেমন ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সরাসরি সহানুভূতি প্রকাশ, অন্যদিকে এটি একটি কৌশলগত বার্তা—যেখানে মানবতা ও ইসলামি ঐক্যকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

এই ঘোষণার পরপরই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং মুসলিম দেশগুলো সৌদি বাদশাহর এই মানবিক উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেছে। ফিলিস্তিনের নেতারা একে সৌদি আরবের "ঐতিহাসিক এবং কৃতজ্ঞতাজনক সহায়তা" হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।


সৌদি বাদশাহর এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে একটি বড় বার্তা—বিশ্ব মুসলিমের নেতৃত্ব কে করতে পারে, কিভাবে মানবিক বিপর্যয়ে কার্যকরভাবে পাশে দাঁড়ানো যায়। এই হজ মৌসুমে গাজার এক হাজার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ যখন কাবার সামনে দাঁড়াবেন, তখন সেটা শুধুই ধর্মীয় পর্ব পালন হবে না—সেটা হবে এক অভাবনীয় মানবিক সাক্ষ্য।

Aucun commentaire trouvé


News Card Generator