close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

চিকিৎসা নিতে গিয়ে দখল হাসপাতাল

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
আধুনিক চিকিৎসার আশায় আসা রোগীরা ফিরছেন হতাশ হয়ে। ৬০০ কোটি টাকার হাসপাতাল এখন আন্দোলনকারীদের দখলে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পুলিশ, এমনকি সেনাবাহিনীও ব্যর্থ। চাঞ্চল্যকর এই পরিস্থিতিতে পাঁচ হাজার রোগীর সেবা..

চোখের আলো ফেরাতে এসে আন্দোলনের অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে সেবাবঞ্চিত মানুষ। জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল—দেশের সর্বাধুনিক সরকারি চক্ষু চিকিৎসাকেন্দ্র—গত ১৩ দিন ধরে কার্যত অচল। একে তো হাসপাতাল নয়, বরং রূপ নিয়েছে আবাসিক হোটেল বা আন্দোলনকারীদের ‘ঘাঁটি’তে।

রাজধানীর এই গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা হাজারো মানুষ প্রতিদিন ফিরছেন নিরাশ হয়ে। মূল ভবনজুড়ে অবস্থান করছেন ‘জুলাই আন্দোলনে’ আহত কিছু ব্যক্তি। তাদের দাবি, ঢাকায় থাকার জায়গা নেই, তাই তারা হাসপাতালেই থাকবেন যতদিন না সরকার তাদের দাবি মানে।

সাম্প্রতিক একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানা গেছে, ২৮ মে এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনকারীরা হাসপাতালের নিয়ন্ত্রণ নেয়। চিকিৎসক ও নার্সদের ওপর হঠাৎ হামলা চালানো হয়, এরপর থেকেই সেবা কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। নিরাপত্তার অভাবে চিকিৎসকরা আর কাজে ফিরছেন না।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পুলিশ, এমনকি সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে একাধিকবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও ফল মেলেনি। বরং আন্দোলনকারীদের দখল আরও সুসংহত হয়েছে। তাদের খাবার ও অন্যান্য চাহিদা পূরণ করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আধুনিক এই হাসপাতাল এখন আন্দোলনকারীদের রাত্রিযাপনের জায়গা।

গত ৪ জুন এক পর্যায়ে পুলিশি পাহারায় সীমিত পরিসরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ চালু করা হয়। গঠন করা হয় মেডিকেল বোর্ড, যারা আন্দোলনকারীদের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করে জানান, তাদের অধিকাংশের হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন নেই। কিন্তু এই রিলিজ আদেশ মানতে রাজি হননি কেউ। বরং রিলিজ পেপার ছিঁড়ে ফেলে, তারা ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের কক্ষ ঘেরাও করে রাখেন দীর্ঘ সময়।

আন্দোলনকারীদের মধ্যে কেউ কেউ সরাসরি জানিয়েছেন, তারা হাসপাতাল ছাড়বেন না—এখান থেকেই তারা সরকারকে চাপ প্রয়োগ করবেন। কেউ কেউ আবার দাবি করছেন, সরকারি নিয়োগ, টেন্ডার, এমনকি আর্থিক সুবিধা নিয়ে আলোচনা চালাতে হাসপাতালকেই বেছে নিয়েছেন নিরাপদ জায়গা হিসেবে।

বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত অভিযোগ থাকায় তারা গ্রেপ্তার এড়াতেই চিকিৎসার অজুহাতে হাসপাতালেই অবস্থান করছেন।

চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, অনেকেই আসলে চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়াই হাসপাতালে রয়েছেন। কেউ কেউ বিদেশ থেকেও চিকিৎসা নিয়ে ফিরে এসে নতুন করে ভর্তি হয়েছেন, কিন্তু তাতেও তারা সন্তুষ্ট নন। এর ফলে হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে।

প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। চক্ষু সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিল রোগের বিশেষায়িত চিকিৎসা একমাত্র এখানেই হয়। কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে তারা সেবা থেকে বঞ্চিত, যা এক ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি করছে।

ঈদের আগেও বেশ কয়েকজন আহত বাড়ি ফিরলেও তারা আনুষ্ঠানিকভাবে হাসপাতাল ছাড়েননি। বরং জানিয়েছেন, সুবিধামতো সময়ে আবার ফিরে আসবেন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল। সরাসরি ব্যবস্থা না নিয়ে, ধৈর্য ও সময় নিয়ে সমাধান খোঁজা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না করা যায়, তাহলে সাধারণ রোগীদের যেমন অপূরণীয় ক্ষতি হবে, তেমনি সরকারের স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপরও আস্থার বড় সংকট তৈরি হবে।


🔚 উপসংহার:
চিকিৎসাসেবার জন্য নির্মিত দেশের একমাত্র আধুনিক চক্ষু হাসপাতাল আজ রাজনৈতিক দখলের শিকার। এর মাশুল দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। এখন প্রশ্ন—কখন ফিরবে সেই আলো, যা চিকিৎসা না, বরং মানুষের চোখের আশার প্রতীক হয়ে উঠেছিল এই হাসপাতাল?

No comments found


News Card Generator