close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

চেনাব নদীর বাঁধ খুলে দিল ভারত, পাকিস্তানে বন্যার শঙ্কা

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ভারত হঠাৎ করে চেনাব নদীর বাঁধ খুলে দেওয়ায় পাকিস্তানে সৃষ্ট হয়েছে বন্যার আতঙ্ক। পানির প্রবল স্রোত নেমে আসছে কৃষিভিত্তিক অঞ্চলের দিকে, যেখানে ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎ ও ফসল উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীলতা তীব্র।..

পূর্ব ঘোষণা বা সতর্কতা ছাড়াই ভারতের নেওয়া এক সিদ্ধান্তে চেনাব নদীর তীরবর্তী পাকিস্তানি জনপদগুলো পড়েছে চরম ঝুঁকির মুখে। দেশটির রামবান জেলার বাগলিহার জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধের গেট হঠাৎ খুলে দেওয়ায় পানি স্রোতের মতো নেমে যাচ্ছে পাকিস্তানের দিকে। এমন পরিস্থিতি নদীতীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে সম্ভাব্য বন্যার আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ‘দ্য ইকোনমিক টাইমস’-এর বরাতে জানা গেছে, গত শনিবার (১০ মে) চেনাব নদীর উপর নির্মিত বাগলিহার বাঁধের দুটি গেট খোলা হয় এবং রবিবার (১১ মে) খোলা হয় আরও একটি গেট। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত এই গেটগুলো খোলা রাখা হয়েছিল। এতে ভারী পানিপ্রবাহ শুরু হয় পাকিস্তানের অভ্যন্তরে। বিষয়টি ঘিরে উদ্বেগ ছড়িয়েছে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও কৃষি মহলে।

ভারতের জম্মু-কাশ্মীর অঞ্চলে সম্প্রতি টানা ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় নদীতে পানির চাপ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ফলে পানি ধারণক্ষমতা অতিক্রম করে যায় বাগলিহার বাঁধে। ধারণা করা হচ্ছে, পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভারত বাধ্য হয়েই গেট খুলে দিয়েছে। কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।

সিন্ধু চুক্তি কি মৃতপত্রে পরিণত?

১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত হয়েছিল ঐতিহাসিক সিন্ধু পানি চুক্তি। এতে নির্ধারিত হয়েছিল, ছয়টি নদীর মধ্যে ভারতের জন্য নির্ধারিত তিনটি (রবি, বিয়াস, সুতলেজ) এবং পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত তিনটি (ইন্দাস, ঝেলাম, চেনাব)। চুক্তি অনুযায়ী, ভারত পশ্চিমাঞ্চলের নদীগুলোর পানি সংরক্ষণ বা প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না, যদিও সীমিত ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে।

তবে গত কয়েক বছরে কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার পর ভারত চুক্তিটি স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয় এবং পানি নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। বিশেষ করে চেনাব ও ঝেলাম নদীর ওপর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রবণতা বাড়িয়েছে নরেন্দ্র মোদি প্রশাসন। ভারতীয় রাজনীতিবিদদের ভাষায়, পাকিস্তানকে চাপে রাখতে পানি প্রবাহও কূটনৈতিক অস্ত্র হয়ে উঠেছে।

বারবার গেট খোলা-বন্ধ, পাকিস্তানের কৃষিতে বিপর্যয়ের শঙ্কা

গত সপ্তাহজুড়েই একাধিকবার খোলা ও বন্ধ করা হয়েছে চেনাব ও ঝেলাম নদীর বাঁধের গেট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে পাকিস্তানের নদীতীরবর্তী এলাকা ও কৃষি ব্যবস্থায় মারাত্মক প্রভাব পড়বে। পাকিস্তানের কৃষি খাত মূলত পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীগুলোর পানির ওপর নির্ভরশীল। একদিকে পানির প্রবাহ কমলে সেচব্যবস্থা ভেঙে পড়বে, অন্যদিকে হঠাৎ প্রবাহ বেড়ে গেলে বন্যায় ভাসবে ফসলের খেত।

এছাড়া পাকিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের মাধ্যমে। উজানে পানি আটকে রাখা হলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিতে পারে, আর হঠাৎ পানির চাপে বাঁধ ও টারবাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। ফলে এই পানি কূটনীতির যুদ্ধ এখন হয়ে উঠেছে জীবন-মরণ প্রশ্ন

কূটনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে, সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা

ভারতের এমন আচরণকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানে রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক মহলে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর আগেও পানি ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় ও সীমান্তে সংঘর্ষ হয়েছিল, যা পরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে পরিণত হয়। কিন্তু এরপরেও ভারত তার আগের অবস্থান থেকে সরে আসেনি। চুক্তি স্থগিতই রেখেছে এবং সুযোগ পেলেই নদীগুলোর প্রবাহে হস্তক্ষেপ করছে।

শেষ কথা: পানি এখন অস্ত্র?

বিশ্লেষকরা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে পানির মত সংবেদনশীল ইস্যুতে উত্তেজনা বাড়া আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে। যখন পানি অস্ত্রে পরিণত হয়, তখন তার ফলাফল শুধু কৃষক বা বিদ্যুৎকেন্দ্রেই সীমাবদ্ধ থাকে না—তা ছড়িয়ে পড়ে সামগ্রিক ভূরাজনীতিতে।

Aucun commentaire trouvé


News Card Generator