গাজীপুরে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে, কারণ ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনায় বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে শুক্রবার রাতে হামলার শিকার হয়েছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। এই বর্বরোচিত ঘটনার প্রতিবাদে বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে সরকার পতনের নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।
বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় গাজীপুরের রাজবাড়ি মাঠে অনুষ্ঠিত হবে এই প্রতিবাদী সমাবেশ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ এই সমাবেশে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। সংগঠনের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে বলা হয়েছে, ‘গাজীপুরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠকদের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসী মোজাম্মেল-জাহাঙ্গীরের চাপাতিবাহিনীর হামলার প্রতিবাদে আজ শনিবার বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন সারাদেশের আপামর ছাত্রজনতা ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দরা। স্থান: রাজবাড়ি মাঠ, গাজীপুর, সময়: বেলা ১১.০০ ঘটিকা।’
জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকেও একই দিনে সকাল সাড়ে ১০টায় ডিসি অফিস চত্বরে আরেকটি বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গাজীপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর খুনি আ ক ম মোজাম্মেল ও জাহাঙ্গীর এবং আওয়ামী দোসরদের সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদ ও অবিলম্বে বিচার নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ হবে।’
সংঘর্ষের কারণ ও আহতদের অবস্থা
জানা গেছে, ছাত্রদের একটি দল আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছিল। এ সময় সংঘর্ষ বাধে এবং মোজাম্মেল বাহিনীর লোকজন তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এই হামলায় বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন, যাদের মধ্যে পাঁচজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। আহতদের মধ্যে রয়েছেন শুভ শাহরিয়া (১৬), ইয়াকুব (২৪), সৌরভ (২২), কাশেম (১৭) ও হাসান (২২)। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকদের সূত্রে জানা গেছে।
ছাত্র আন্দোলনের কঠোর হুঁশিয়ারি
এই ঘটনার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে লিখেছেন, ‘গাজীপুরে আজকেই হবে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের শেষদিন, আমরা আসছি…।’ তার এই পোস্টের পরপরই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং তারা বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকে।
সাধারণ জনগণের প্রতিক্রিয়া
গাজীপুরের সাধারণ মানুষও এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। অনেকেই বলছেন, ছাত্রদের ওপর হামলা চালিয়ে দমন-পীড়ন চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হলে গাজীপুরজুড়ে আরও বৃহৎ আন্দোলনের ঘোষণা আসতে পারে বলেও জানা গেছে।
প্রশাসনের ভূমিকা কী হবে?
এখন পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কঠোর পদক্ষেপের ঘোষণা আসেনি। তবে বিক্ষোভ ঠেকাতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যেকোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত রয়েছে।
পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে?
এই ঘটনার পর গাজীপুরজুড়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ছাত্রদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলনে নামতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতি সরকারের জন্য নতুন করে সংকট তৈরি করতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন কীভাবে এই সংকট মোকাবিলা করে এবং ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কী পদক্ষেপ নেয়।
कोई टिप्पणी नहीं मिली



















