বগুড়ায় গণ অধিকার পরিষদের ছাত্রসংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের সদ্যঘোষিত জেলা কমিটিকে ঘিরে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এই কমিটিতে সদরুল আনাম আশিকসহ ২-৩ জন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর অনুপ্রবেশ ঘটেছে, যা সংগঠনটির নীতি ও আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছেন অনেকে। বিষয়টি নিয়ে সংগঠনের অভ্যন্তরে যেমন আলোচনার ঝড় উঠেছে, তেমনি বাইরে সাধারণ কর্মীদের মাঝেও বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে।
গত ২৭ মে মঙ্গলবার ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামীন মোল্লা এবং সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান এক বছরের জন্য ৪৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি আংশিক জেলা কমিটির অনুমোদন দেন। তারা আগামী এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশনাও দেন। ঘোষিত এই কমিটিতে মিজানুর রহমান পলাশ সভাপতি, মাসুম রহমান সাধারণ সম্পাদক এবং নাজমুল হাসান নেহাল সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান।
তবে কমিটি ঘোষণার পরই অভিযোগ ওঠে—নিষিদ্ধ ও বিতর্কিত অতীত থাকা কিছু ছাত্রলীগ নেতাকে ব্যক্তিগত সুবিধার বিনিময়ে কমিটিতে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে সদরুল আনাম আশিকের নাম ঘিরে বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে আসে। যদিও ছাত্র অধিকার পরিষদের জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান নেহাল এসব অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছেন।
নেহাল দাবি করেন, “সদরুল আনাম আশিক ২০২৩ সাল থেকে আমাদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। তিনি নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটগ্রাম ইউনিয়ন শাখার আহ্বায়ক ছিলেন। সরকারি আজিজুল হক কলেজে পড়ার সময় প্রতিপক্ষের লোকজন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাকে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িয়ে বিভ্রান্তিকর পোস্টারিং করে। তার বাবা বিএনপি করায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় কয়েকটি মামলায় জড়ানো হয়। এখন এই অপপ্রচার মূলত আমাদের সংগঠনকে বিতর্কিত করতেই চালানো হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “এটি একটি সাজানো পরিকল্পনার অংশ, যাতে ছাত্র অধিকার পরিষদের রাজনৈতিক অবস্থান দুর্বল করা যায়।”
এদিকে, ঘোষিত আংশিক কমিটিতে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদের মধ্যে রয়েছেন:
-
সিনিয়র সহ-সভাপতি: নিপু খান
-
সহ-সভাপতিরা: সিয়াম রহমান, জোবায়ের প্রধান নোমান, আমির হামজা, অনন্ত ইসলাম অন্তর, ইউসুফ আলী খান ও আব্দুল্লাহ আল ওয়াহাব
-
সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক: এনামুল হক
-
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক: সাজেদুর রহমান সাজু, মুন্না প্রামাণিক, কাউসার হাবীব ও ফেরদাউস হোসেন
-
সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক: সুমন খান, রাকিবুল ইসলাম, মাহিদুল ইসলাম, জোবায়ের রহমান, মনিরুল ইসলাম মনির ও তারেক রহমান
অন্যান্য পদে রয়েছেন:
-
দপ্তর সম্পাদক: আল হাদীদ
-
উপ-দপ্তর সম্পাদক: সীমান্ত হক
-
প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক: লাবু হোসাইন
-
অর্থ সম্পাদক: নাহিদ হাসান
-
তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক: মীর ফাহিম হাসান
-
সাহিত্য সম্পাদক: মাঈনুল হাসান
-
সংস্কৃতি সম্পাদক: আব্দুর রহিম দেওয়ান
-
রাজনৈতিক শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক: নাঈম হোসেন
-
গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি সংরক্ষণ ও গবেষণা সম্পাদক: মনির হোসেন
-
ক্রীড়া সম্পাদক: সুমন ইসলাম
-
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক: সোহেল রানা মিঠু
-
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক: মাহমুদুল হাসান শাওন
-
আইন সম্পাদক: বুলবুল আহমেদ
-
জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সম্পাদক: ফাহাদ আপন
-
ছাত্রী সম্পাদক: রোজিফা আক্তার
-
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সম্পাদক: তানভীর আহমেদ
-
ত্রাণ ও দুর্যোগ সম্পাদক: সাফিউল ইসলাম
-
ধর্ম সম্পাদক: মামুদুল হাসান
কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে রয়েছেন: নাঈমুর রহমান, রাব্বি হাসান, আহসান হাবীব, সদরুল আনাম আশিক, রাফি হাসান ও তৌফিক হাসান।
এ বিষয়ে সদরুল আনাম আশিকের মন্তব্য জানতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়, যা বিতর্ককে আরও গভীরতর করেছে।
স্থানীয় রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এমন বিতর্কিত অন্তর্ভুক্তি সংগঠনের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে এবং ভবিষ্যতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে জেলা রাজনীতিতে।



















