close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

চারুকলায় আগুন: পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রার প্রতীকী ‘ফ্যাসিস্টের মুখ’ সম্পূর্ণ ছারখার, পুড়েছে শান্তির পায়রাও..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ভোরের আঁধারে আগুনের লেলিহান শিখায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বৈশাখী আনন্দ শোভাযাত্রার কেন্দ্রীয় প্রতীক পুড়ে ছাই। উদ্দেশ্যমূলকভাবে ‘ফ্যাসিবাদের মুখ’ নিশানা করা হয়েছে বলে জানায় প্রশাসন। তদন্তে নেমেছে..

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে পহেলা বৈশাখের প্রাক্কালে ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে বর্ষবরণের প্রতীকী শিল্পকর্ম—‘ফ্যাসিস্টের মুখাকৃতি’। আগুনের তাণ্ডবে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ‘শান্তির পায়রা’ও। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে নেমে এসেছে হতাশা ও ক্ষোভের ছায়া।

ঘটনাটি ঘটে আজ শনিবার ভোর ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে। সময়টা যখন পুরো ক্যাম্পাস নিস্তব্ধ, তখন আগুন লাগার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মো. ইসরাফিল ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। মো. ইসরাফিল নিশ্চিত করেছেন, “ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতিকে টার্গেট করেই আগুন লাগানো হয়েছে। এটি সম্পূর্ণরূপে পুড়ে গেছে। এমনকি আগুনে পায়রাটিও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”

তিনি আরও জানান, “ফায়ার সার্ভিস আসার আগেই আগুন ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং শিল্পকর্মটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। কারা এই আগুন লাগিয়েছে তা এখনও জানা যায়নি, তবে এটি কোনো নিছক দুর্ঘটনা নয় বলেই আমাদের ধারণা।”

চারুকলা অনুষদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা হতাশা প্রকাশ করে জানান, পহেলা বৈশাখের এই আনন্দ শোভাযাত্রা কেবল একটি উৎসব নয়—এটি একটি সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের বার্তা। প্রতিবছর নববর্ষকে কেন্দ্র করে তারা যে প্রতীকী শিল্পকর্ম তৈরি করেন, তা দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতাকে তুলে ধরে। এ বছর ‘ফ্যাসিস্টের মুখাকৃতি’ ছিল শোভাযাত্রার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু—যেটি এক ধরনের প্রতীকী প্রতিবাদও বহন করে।

একজন শিক্ষার্থী বলেন, “এই শিল্পকর্মগুলো কেবল পহেলা বৈশাখের সৌন্দর্য নয়, বরং সমাজের বিভিন্ন অনিয়ম, অমানবিকতা ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান প্রকাশের মাধ্যম। আজকের ঘটনায় আমরা হতবাক।”

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হয়েছে। ক্যাম্পাসের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং কারা বা কোন গোষ্ঠী এর সঙ্গে জড়িত তা নির্ধারণে কাজ চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক করা হয়েছে যাতে ভবিষ্যতে এমন কোনো ঘটনা পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

ফায়ার সার্ভিসের প্রাথমিক তদন্তেও আগুন লাগার পেছনে কোনো বৈদ্যুতিক ত্রুটি বা দুর্ঘটনাজনিত কারণের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এতে করে ধারণা আরও জোরালো হয়েছে যে, এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নাশকতার অংশ হতে পারে।

অনেকে মনে করছেন, চারুকলার এই প্রতীকী প্রতিবাদ ও মুক্তচিন্তার প্রতিফলন কিছু গোষ্ঠীর অপছন্দ হতে পারে, আর সেখান থেকেই এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্ম।

চারুকলা অনুষদের ডিন এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রা নির্ধারিত সময়েই আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আগুনে পোড়া শিল্পকর্মগুলোর জায়গায় নতুন করে প্রতীক নির্মাণে কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানা গেছে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে এবং শোভাযাত্রার দিন পুরো রুটে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি।

শেষ কথা:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় এ ধরনের হামলা শুধুই একটি শিল্পকর্ম ধ্বংসের ঘটনা নয়; এটি একটি প্রগতিশীল চিন্তার, সংস্কৃতির ও সৃজনশীলতার ওপর আঘাত। এই ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও দোষীদের গ্রেপ্তারে প্রশাসনের উদ্যোগ কামনা করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

Geen reacties gevonden