চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ঘিরে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ঘটে গেল এক নাটকীয় ঘটনা। ওই দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর, রাতেই গ্রেফতার করা হলো মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী রাজিয়া সুলতানা শম্পাকে।
৪০ বছর বয়সী এই নেত্রী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে পরিচিত। জানা গেছে, জেলা শহরের পুরাতন স্টেডিয়ামে চলমান বাণিজ্য মেলায় একটি স্টল বরাদ্দ নিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই কেক কেটে উদযাপন করেন দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, যা মোবাইল ফোনে ধারণ করে পরে ফেসবুকে পোস্ট করেন তিনি।
প্রথমদিকে বিষয়টি তেমন আলোড়ন সৃষ্টি না করলেও, ভিডিওটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও গ্রুপে। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়তেই নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। কেউ বলছেন, এটি একটি সাধারণ উদযাপন, আবার কেউ এটিকে উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা বলেও দাবি করছেন।
জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রাহিম গণমাধ্যমকে বলেন, “ওই ভিডিও দেখে অনেকে মনে করছেন এটি ব্যক্তি স্বার্থে আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা। বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত।”
এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার পুলিশ মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে শহরের শিয়ালা কলোনি পাড়ার নিজ বাড়ি থেকে রাজিয়া সুলতানাকে গ্রেফতার করে। তার গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম।
তিনি জানান, “ভিডিওটি প্রকাশের পর আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি। তারপরেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।”
তবে এই গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে জেলা জুড়ে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী জানিয়েছেন, এই উদযাপন ছিল সম্পূর্ণ দলীয় ও স্বতঃস্ফূর্ত। তারা মনে করছেন, বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।
একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে শৃঙ্খলা এবং কর্মপন্থা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। একটি ভিডিও পোস্ট কেন্দ্র করে একজন দলীয় নেত্রীর গ্রেফতার, সেটিও নিজের স্টলে কেক কাটার মতো কার্যক্রম, প্রশাসনের এমন পদক্ষেপ কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়েও চলছে বিতর্ক।
রাজিয়া সুলতানার পরিবারের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। তার স্বামী বলেন, “আমার স্ত্রী কোনো অপরাধ করেনি। সে কেবলমাত্র তার দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেক কেটেছে, এতেই যদি গ্রেফতার করতে হয় তবে রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ আরও হুমকির মুখে পড়বে।
বর্তমানে রাজিয়া সুলতানাকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক মামলা দায়ের হয়নি, তবে তদন্ত শেষে সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের এই ঘটনা ফের প্রমাণ করে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সামান্য একটি পোস্ট কতোটা প্রভাব ফেলতে পারে। রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ও উদযাপন যদি অনুমতি ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়, তবে তা হতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্কের সূচনাবিন্দু। এখন দেখার বিষয়—এই গ্রেফতার নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরে কিংবা বাইরে কী প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, এবং রাজিয়া সুলতানার পরিণতি কী হয়।



















