রাজধানীর নিউ মার্কেটের চাঁদনী চক মার্কেট আবারও সহিংস ঘটনার কেন্দ্রে। সোমবার (২৭ মে) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক নারী শিক্ষার্থীকে কটূক্তি ও হেনস্তা করার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে দুই পুরুষ সহপাঠী ব্যবসায়ীদের মারধরের শিকার হন। শুধু তাই নয়, একজনকে দোকানের ভিতরে নিয়ে আটকে রেখে চালানো হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।
এ ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে শুরু করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে শিক্ষার্থীরা নিউ মার্কেট থানার সামনে অবস্থান নেয় এবং বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।
ঘটনার সূত্রপাত কীভাবে?
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা যায়, রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহেদুল ইসলাম, আয়াজুর রহমান ও এক নারী শিক্ষার্থী কাপড় কিনতে চাঁদনী চক মার্কেটে যান। কাপড় কেনার সময় দামাদামি চলাকালে এক দোকানদার নারী শিক্ষার্থীকে উদ্দেশ্য করে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে।
এই অপমানজনক মন্তব্যের প্রতিবাদ করেন শাহেদ ও আয়াজ। তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই দোকানের ম্যানেজারসহ আশপাশের দোকানদাররা একজোট হয়ে শিক্ষার্থীদের উপর চড়াও হয়। শুরু হয় বেধড়ক মারধর। একপর্যায়ে শাহেদকে জোরপূর্বক একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে প্রায় ৪০ মিনিট আটকে রেখে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়, এমনকি হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়।
আহত শিক্ষার্থীদের অবস্থা ও চিকিৎসা
মারধরের ফলে আহত শিক্ষার্থীদের তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারে এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ঘটনার খবর পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান আহতদের দেখতে মেডিকেল সেন্টারে ছুটে যান।
ঢাবি প্রশাসনের তীব্র প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম, সহকারী প্রক্টররা এবং হল প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষার্থীর গায়ে হাত তুললে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিক্ষোভ ও মামলার অগ্রগতি
ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে নিউ মার্কেট থানার সামনে অবস্থান নেয় শতাধিক শিক্ষার্থী। তারা অবিলম্বে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানায়। বিক্ষোভ চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্রিয় ছিলেন।
এ ঘটনায় পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে আরও ৫০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যবসায়ীকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। নিউ মার্কেট থানা পুলিশ জানায়, এ পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
শেষ কথা
চাঁদনী চকে শিক্ষার্থীদের উপর এই বর্বর হামলা নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে—সাধারণ নাগরিক, বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীরা কতটা নিরাপদ রাজধানীর বাজার ও জনবহুল এলাকায়? ঘটনার দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা থেকে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কঠোর অবস্থান এবং শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ হয়তো এই সহিংস সংস্কৃতির বিরুদ্ধে একটি শক্ত বার্তা হতে পারে।



















