close
ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!
চাঁদাবাজির কারণে মূল্যস্ফীতির নিয়ন্ত্রণে দুর্ভোগ, নির্বাচিত সরকার আসার আগ পর্যন্ত সমাধান অসম্ভব


বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দেশের বর্তমান মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা নির্বাচিত সরকার আসার আগ পর্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি চাঁদাবাজির বিষয়টি বড় সমস্যা হিসেবে তুলে ধরেন, যা মূল্যস্ফীতির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, "এটা একটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা। যেসব ব্যক্তি বা গোষ্ঠী আগে চাঁদাবাজি করতো, তারা এখনো সক্রিয় রয়েছে, পাশাপাশি রাজনৈতিক কারণে নতুন কিছু গোষ্ঠীও এতে যুক্ত হয়েছে।" তিনি আরো বলেন, নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত, বিশেষ করে রাজনৈতিক ক্ষমতা না থাকায়, এই সমস্যা পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব নয়।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কঠিন চ্যালেঞ্জ
অর্থ উপদেষ্টা জানান, গত কয়েক বছরে দেশে প্রচুর অর্থ ছাপানো হয়েছে এবং কিছু বড় মেগা প্রকল্পের কারণে অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। “মেগা প্রজেক্টের রিটার্ন এত দ্রুত আসে না, তাই সরবরাহ চেইনেও সমস্যা তৈরি হয়েছে। একই সাথে, রেমিট্যান্সের পরিমাণও কমে গেছে,” বললেন তিনি।
এদিকে, খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি হলেও, অন্যান্য পণ্যের মূল্য কিছুটা কমেছে। তিনি বলেন, "আমরা চেষ্টা করছি সরবরাহ ঠিক রাখতে, কিন্তু সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়েছে এবং চাঁদাবাজির কারণে পরিবহন খরচও বাড়ছে।" তিনি এক উদাহরণ দিয়ে বলেন, মহাস্থানগড় থেকে ঢাকায় একটি ট্রাক ভাড়া ৫,০০০ টাকা হলেও, চাঁদাবাজির কারণে তা ১২,০০০ টাকায় পৌঁছে যায়।
চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক ক্ষমতার দুর্বলতা
সালেহউদ্দিন আহমেদ চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বললেও, নির্বাচিত সরকারের অভাবকে সমস্যার মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেন, "আমাদের হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা নেই, তাই জনগণের মধ্যকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।"
তিনি আরো বলেন, "এখন তিনটি গোষ্ঠী চাঁদাবাজির সাথে যুক্ত। একদিকে, পুরোনো গোষ্ঠীগুলো রয়েছে, অন্যদিকে নতুনভাবে রাজনৈতিকভাবে উত্থিত কিছু গোষ্ঠীও এই ব্যবসা করছে। তৃতীয়ত, স্থানীয় জনগণও এটির সঙ্গে যুক্ত।" তিনি মনে করেন, রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এলে, তারা ভোটের দিকে নজর দিয়ে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হবে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মূল্যস্ফীতি
এছাড়াও, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। কুমিল্লায় বন্যা এবং শেরপুর-ময়মনসিংহে অতিবৃষ্টির কারণে আরও চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এইসব দুর্যোগও মূল্যস্ফীতির বৃদ্ধির একটি বড় কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
অর্থ উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন যে, জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। তবে, তিনি এও জানান, একেবারে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব নয়, কারণ এটি একটি আদর্শিক লক্ষ্য হলেও বাস্তবতার সাথে মেলে না।
এসময় তিনি যোগ করেন, "আমরা যতটা সম্ভব চেষ্টা করছি, তবে নির্বাচিত সরকার আসার পরই এই সমস্যা সঠিকভাবে সমাধান হবে।"
বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সরকারকে যে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হচ্ছে, তা স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন অর্থ উপদেষ্টা। তবে তিনি আত্মবিশ্বাসী যে, নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা এলে এই সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব হবে।
Không có bình luận nào được tìm thấy