বরিশালের হিজলায় বিস্ময়কর এক ঘটনা ঘটেছে যা পুরো অঞ্চল জুড়ে সৃষ্টি করেছে তীব্র আলোচনা ও উত্তেজনা। মঙ্গলবার সকালে এম.বি. জানডা নামের একটি লঞ্চে বিছানা বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে যাত্রীদের উপর চড়াও হন হরিনাথপুর ইউনিয়নের সাবেক বিএনপি নেতা মো. খালেক মাঝি ও তার সঙ্গীরা। তবে এবার পরিস্থিতি তার অনুকূলে ছিল না। চাঁদাবাজির প্রতিবাদে যাত্রীরা প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং মুহূর্তেই লঞ্চের ডেকে ঘটে ‘গণধোলাই’ – যার শিকার হন স্বয়ং খালেক মাঝি নিজেই।
মঙ্গলবার সকাল ৯টা, হরিনাথপুর ইউনিয়নের গঙ্গাপুর লঞ্চঘাট। এম.বি. জানডা নামের লঞ্চটি মুলাদীর মৃধার হাট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে হিজলার শৌলা ঘাটে থামলে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী লঞ্চের ডেকে আগে থেকেই বিছিয়ে রাখা চাদর ব্যবহার করার জন্য প্রতি যাত্রীর কাছ থেকে ১,০০০ থেকে ১,৫০০ টাকা দাবি করা হচ্ছিল। এই অনৈতিক অর্থ আদায়ের নেতৃত্বে ছিলেন সাবেক বিএনপি নেতা মো. খালেক মাঝি। অনেক যাত্রী টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে শুরু হয় বেধড়ক মারধর। একপর্যায়ে অন্তত ১৫-১৬ জন যাত্রী আহত হন খালেক মাঝি ও তার লোকজনের হামলায়।
লঞ্চে থাকা মেহেদী হাসান বান্না নামের এক যাত্রী মোবাইল ফোনে জানান, “খালেক মাঝি ও তার দলবল যাত্রীদের উপর হামলা চালায়। একজন যাত্রীর কাছ থেকে জোরপূর্বক ১৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে তারা। পুরো লঞ্চজুড়ে তখন আতঙ্ক বিরাজ করছিল।”
ঘটনার একপর্যায়ে যাত্রীরা ক্ষিপ্ত হয়ে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তারা খালেক মাঝি ও তার সহযোগীদের ঘিরে ধরে বেধড়ক মারধর করে। গণধোলাইয়ের সময় খালেক মাঝি প্রাণ রক্ষার্থে দলবল নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যান। এই ঘটনা ধীরে ধীরে ভাইরাল হয়ে উঠেছে সামাজিক মাধ্যমে।
গণধোলাইয়ের বিষয়টি নিজ মুখেই স্বীকার করেছেন খালেক মাঝি। তবে তিনি দাবি করেন, “আমি চাঁদাবাজি করতে যাইনি। লঞ্চে গোলমাল দেখে থামাতে যাই। যাত্রীরা ভুল বুঝে আমাকে মারধর করেছে।” তার এই বক্তব্যে প্রশ্ন উঠেছে—যদি তিনি চাঁদা আদায় না করে থাকেন, তবে কেন তার সাথে এত সংখ্যক ‘সহযোগী’ ছিল এবং কেনইবা যাত্রীরা এত ক্ষিপ্ত হয়েছিল?
ঘটনার পর হরিনাথপুর ইউনিয়নে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, লঞ্চঘাটে এ ধরনের চাঁদাবাজি দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে, যা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় রক্ষিত। তবে এবার সাধারণ মানুষই রুখে দাঁড়িয়েছে। ঘটনার ভিডিও ফেসবুক ও টিকটকে ছড়িয়ে পড়ায় জনগণের মাঝে ক্ষোভ বেড়েই চলেছে।
এখনও পর্যন্ত কোনো মামলা বা পুলিশের পক্ষ থেকে গ্রেফতারের খবর পাওয়া যায়নি। তবে বরিশালের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।