মুষলধারে বৃষ্টি, সিক্ত রাজপথ, আর হাজারো মানুষের উচ্ছ্বাস—এরই মধ্যে এক অনন্য রাজনৈতিক বার্তা নিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে হাজির হলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। বৃহস্পতিবার দিনভর বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও থামেনি তাঁর পথসভা, জনসংযোগ কিংবা শহীদ পরিবারদের সঙ্গে মতবিনিময়ের কর্মসূচি।
মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় জনগণের সঙ্গে একাধিক স্থানে মতবিনিময়কালে নাহিদ ইসলাম বলেন,
“আপনারা চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। হকের পক্ষে কথা বলুন। আমরা আপনাদের জন্য হক ও ইনসাফের রাজনীতি উপহার দিতে চাই। আমরা ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করি না, করি জনগণের জন্য। এটাই আমাদের রাজনীতির দর্শন।”
একাধিক পথসভা, লিফলেট বিতরণ ও শহীদ পরিবারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ—সব মিলিয়ে দিনভর কর্মসূচি চলে তার নেতৃত্বে।
সবচেয়ে নজরকাড়া মুহূর্ত আসে মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পসংলগ্ন এলাকায়। সেখানে মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যেও কর্মীদের উল্লাস ও জনগণের ঢল দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।
তিনি বলেন,
“আপনারা যে এই ভীষণ বৃষ্টির মধ্যেও উপস্থিত হয়েছেন, এজন্য আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আগামীর বাংলাদেশ আপনাদের হাতেই গড়ে উঠবে। শহিদের রক্ত আর মানুষের স্বপ্নের ভিত্তিতেই আমরা সামনে এগিয়ে যাব।”
পথসভা শেষে নাহিদ ইসলাম প্রবেশ করেন জেনেভা ক্যাম্পের ভেতর। সংকীর্ণ গলিতে স্থানীয়দের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের সময় এলাকাবাসী স্লোগান দেন—
“এসেছে রে এসেছে, নাহিদ ভাই এসেছে”
“নাহিদ ভাই এগিয়ে যাবে, ক্যাম্পবাসী তোমার সাথে”
পরে পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী তিনি যান মোহাম্মদপুর সূচনা কমিউনিটি সেন্টারে, যেখানে স্থানীয় শহীদ পরিবারদের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন,
“আমরা এমন একটি সমাজ গড়তে চাই, যেখানে সব ধর্ম, মত ও শ্রেণির মানুষ সমান মর্যাদা পাবে। এটি কেবল একটি রাজনৈতিক অঙ্গীকার নয়, এটি শহিদদের রক্তের দাবি। আমরা সেই বাংলাদেশ গড়তেই রাজপথে।”
এরপর তিনি শহীদ সৈকতের কবর জিয়ারত করেন এবং এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। এর পরপরই মোহাম্মদপুর টাউন হল, তিন রাস্তা মোড় ও ধানমন্ডি এলাকায় পথসভা করেন এবং লিফলেট বিতরণ করেন।
এই সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেত্রী ডা. তাসনিম জারা, রিফাত রশিদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
নাহিদ ইসলামের এই ব্যতিক্রমী কর্মসূচি শুধু একটি রাজনৈতিক প্রচার নয়, বরং এটি ছিল সাধারণ মানুষের হক, ইনসাফ ও মর্যাদার লড়াইয়ের এক দৃশ্যমান বহিঃপ্রকাশ। বৃষ্টিতে ভিজে হলেও জনগণের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হয়ে তিনি যে বার্তা দিলেন, তা নিঃসন্দেহে আগামীর রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।