close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

চালের দামে আ গু ন! ঈদের পরপরই বাজারে নেমে এলো দু র্ভো গ

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ঈদের স্বস্তির রেশ কাটতে না কাটতেই আবার চালের দামে হঠাৎ আগুন! মাত্র এক সপ্তাহেই কেজিপ্রতি ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে দাম। সরবরাহ যথেষ্ট থাকার পরও কেন এমন দাম বাড়ছে? গরিবের পাতে ভাত থাকবে তো? জানুন বিশদ ব..

ঈদের সময়টাতে যারা একটু স্বস্তি পেয়েছিলেন, তাঁদের সেই শান্তিটুকুও যেন টিকলো না বেশিদিন। ঈদুল আজহার সপ্তাহ ঘুরতেই রাজধানীর বাজারগুলোতে চালের দাম হঠাৎ করেই বেড়ে যাওয়ায় আবারও নাভিশ্বাস উঠেছে গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষের। রোজা থেকে ঈদ পর্যন্ত চালের বাজার মোটামুটি নিয়ন্ত্রিত থাকলেও এখন সেই চিত্র পুরোপুরি বদলে গেছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, টাউন হল বাজার ও মিরপুর-৬ কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিভিন্ন প্রকার চালের দাম কেজিপ্রতি ২ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। বিশেষ করে মিনিকেট ও উন্নতমানের চালের ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, কেজিতে মিনিকেটের দাম বেড়েছে ৬ থেকে ৮ টাকা। মাঝারি মানের চাল ও মোটা চালেও ২–৩ টাকা বাড়তি গুণতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

দেশের ধান উৎপাদনের অন্যতম বড় এলাকা নওগাঁয়ও চালের পাইকারি দামে হঠাৎ বাড়তি চাপ পড়েছে। নওগাঁর চালকলমালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার জানিয়েছেন, জিরাশাইল ও কাটারিভোগ জাতের ধানের দাম মাত্র এক সপ্তাহেই মণপ্রতি ১২৫ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে পাইকারি চালের বাজারে—যেখানে কেজিপ্রতি ১ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে দাম।

এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে স্থানীয় বাজার থেকে শুরু করে রাজধানী পর্যন্ত চালের দাম প্রতিদিনই উপরের দিকে উঠছে। অথচ বাজারে চালের ঘাটতি নেই—সরবরাহ রয়েছে প্রচুর। তাহলে হঠাৎ এই মূল্যবৃদ্ধির কারণ কী?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাস্তবে কোনো সংকট নেই। বরং মিলমালিক ও করপোরেট গোষ্ঠী ধান আগেভাগেই কম দামে কিনে মজুত করে রেখেছে। এখন বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে। তাঁদের মতে, ঈদের আগে ধান সংগ্রহ করে যারা গুদামে রেখেছে, তারাই এখন বাজারে চাল ছাড়তে গড়িমসি করছে এবং দামের পেছনে বিভিন্ন অজুহাত দাঁড় করাচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক ও সাধারণ মানুষ। যখন কৃষকের হাতে ধান থাকে, তখন তাঁরা পছন্দমতো দাম পান না। আর বাজারে যখন ধান থাকে না, তখন চালকল মালিকরা দাপট দেখিয়ে মূল্য নিয়ন্ত্রণ করেন।

চলতি মৌসুমে বোরো ধানের রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে ২ কোটি ১৪ লাখ টন ধান উৎপাদিত হয়েছে, যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এমন অবস্থায় বাজারে ধানের সরবরাহ কম হওয়ার কথা নয়।

কিন্তু মাঠপর্যায়ের বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, সরকার প্রতি বছর যে পরিমাণ ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে, তার একটি বড় অংশ পূরণই হয় না। এর পেছনে রয়েছে অব্যবস্থাপনা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গাফিলতি।

সরকার যদি মৌসুমের শুরুতেই কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহ করতো এবং পর্যাপ্ত মজুত রাখতো, তাহলে চালকল মালিক ও মজুতদারদের হাতে বাজার পড়তো না। অথচ ঠিক বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে—সরকারের সংগ্রহ কম, বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে একটি শ্রেণি।

বর্তমানে সরকার টিসিবি ও খাদ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে কিছু পরিমাণ চাল বিক্রি করছে অপেক্ষাকৃত কম দামে। কিন্তু তা একদিকে খুব সীমিত এবং অপরদিকে মানুষের চাহিদার তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় এই চাল বিক্রির পয়েন্টে দেখা যায়—প্রচণ্ড ভিড়, লম্বা সারি আর ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

এই চিত্র প্রমাণ করে, মানুষ চরম কষ্টে আছে। বিশেষ করে গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষ এখন পাতে ভাত তুলতেই হিমশিম খাচ্ছে।

সরকারের উচিত এখনই বাজারে চালের সরবরাহ বাড়ানো। প্রয়োজনে বিদেশ থেকে চাল আমদানির পথও খুলে দিতে হবে। সেই সঙ্গে সরকারি মজুত ও খোলাবাজার বিক্রি (ওএমএস) আরও বিস্তৃত করতে হবে।

একই সঙ্গে কঠোরভাবে নজরদারি করতে হবে মিলমালিক ও করপোরেট গোষ্ঠীর ওপর, যারা বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। শুধু ঘোষণা দিয়ে নয়, বাস্তব পদক্ষেপে নামতে হবে সরকারকে।

গরিব মানুষের পাতে যেন ভাত না উঠে, সেই দিন যেন ফিরে না আসে। রেকর্ড উৎপাদনের দেশে চালের দাম এভাবে হঠাৎ বাড়া মানে শুধুই একটি সিন্ডিকেটের খেলা। এই খেলা বন্ধ করতে এখনই দরকার সাহসী ও শক্ত পদক্ষেপ।

No comments found


News Card Generator