জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা দেশের বর্তমান সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। মঙ্গলবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, এই পদ্ধতিতে নির্বাচিত নারী এমপিদের সঙ্গে জনগণের সরাসরি সম্পর্ক তৈরি হয় না, যা গণতান্ত্রিক প্রতিনিধিত্বের মূল চেতনাকে ব্যাহত করে।
ডা. জারা লিখেছেন, “সংরক্ষিত আসনের মাধ্যমে সংসদে যাওয়া নারী এমপিদের স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ গড়ে ওঠে না। ফলে জনগণের সমস্যার বাস্তব অভিজ্ঞতা বা চাহিদা সংসদে উপস্থাপনের সুযোগ কমে যায়।”
তিনি বলেন, “প্রতিনিধিত্বের ধারণাই হলো— ‘আমি কথা বলছি, কারণ আমাকে কেউ পাঠিয়েছে।’ ভোটারবিহীন প্রতিনিধিত্বে জবাবদিহির জায়গাটা মূলত থাকে দলের প্রতি, জনগণের প্রতি নয়। ফলে সাংসদরা গণতান্ত্রিকভাবে দায়িত্বশীল হয়ে উঠতে পারেন না।
তাসনিম জারার এই মতামতের জবাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের একজন সহযোগী অধ্যাপক এবং নির্বাচন কমিশনের একজন ডেপুটি সচিব প্রশ্ন তোলেন— “সংসদ সদস্যের কি স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ থাকা জরুরি? তাহলে স্থানীয় সরকারের কাজ কী?
এর জবাবে তিনি ব্যাখ্যা দেন, “স্থানীয় সরকার বাস্তবায়নের কাজ করে, আর সংসদ সদস্য নীতিনির্ধারণ করেন। স্থানীয় সরকার যদি দুর্নীতিগ্রস্ত হয় বা বাজেট না পায়, সেই সমস্যা জাতীয় সংসদে তুলে ধরার কাজ এমপির। এটা দ্বন্দ্ব নয়, বরং গণতন্ত্রের স্তরগত সংযুক্তি।
ডা. জারা বলেন, “শ্রমিকের কান্না, কৃষকের দুর্দশা বা মায়ের অভাবের কথা রিপোর্টে নয়, সরাসরি মানুষের মুখ থেকে শোনা দরকার। এসব বাস্তব অভিজ্ঞতা ছাড়া আইন করা কেবল কাগুজে কথা হয়ে দাঁড়ায়। আর এই সংযোগ শুধু সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমেই সম্ভব।
তিনি যুক্তরাজ্যের উদাহরণ টেনে বলেন, “সেখানে প্রতিটি এমপি নিজের এলাকা থেকে নির্বাচিত হন এবং সাপ্তাহিকভাবে ‘constituency surgeries’ চালান, যেখানে সাধারণ মানুষ এসে এমপিকে নিজেদের সমস্যা জানায়। ব্রিটিশ পার্লামেন্টেও কেউ বলে না, জনগণের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক ছাড়াও কাজ চালানো যাবে।
পোস্টের শেষে তিনি বলেন, “আমরা চাই নারী নেতৃত্ব আসুক, কিন্তু সেটি হোক রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাবান, ভোটে নির্বাচিত, জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য এমন প্রতিনিধি। এটা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে গণতন্ত্রের মৌলিক শর্ত।